আগুনের গ্রাসে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র বাড়ি, ভস্মীভূত অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র ও ব্যবহৃত সামগ্রী

ফলকের উপর বড়ো বড়ো করে লেখা ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’। বাকি বাড়ির দশা রুগ্ন, ভগ্নপ্রায়। তবে তার মধ্যেও কোনোরকমে টিকে আছে কিংবদন্তি বাদ্যযন্ত্রীর পুরনো বাড়িটি। তবে তার যাবতীয় সংগ্রহ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। রবিবার বাংলাদেশের ব্রাহ্মণ্যবাড়িয়া শহরে একদল বিক্ষোভকারীর হাতে শেষ হল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-এর অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র এবং ব্যবহৃত সামগ্রী। অভিযোগের আঙুল উঠেছে ‘হেফাজতে ইসলাম’ সংগঠনের সমর্থকদের দিকেই।

সঙ্গীতের টানে ঘর ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রদেশ পৌঁছে গিয়েছিলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। যখন ফিরেছিলেন, তখন তিনি কিংবদন্তি। ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশে ফিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেল রোডের এই বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। জন্মস্থান শিবপুর গ্রামে আছে আরও দুটি বাড়ি। তবে জেলা সদরে অবস্থিত হওয়ার সুবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়িতেই সংগ্রহশালা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। ২০১১ সালে এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার আগেই লোকমুখে বাড়িটির নাম হয়ে গিয়েছে ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’।

সমগ্র বাড়িটিতে একটি মিউজিয়াম কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু ক্লাসরুম, প্রশাসনিক কক্ষ, সরোদমঞ্চ এবং একটি স্টোররুম। মাইহার ঘরানার স্রষ্টার সমস্ত চিহ্ন ছড়িয়ে বাড়িজুড়ে। তবে এর আগেও মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে এই সংগ্রহশালা। ২০১৬ সালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যেই একদল মাদ্রাসা ছাত্র আগুন লাগিয়ে দেয় মিউজিয়াম কক্ষে। সেবারে আলাউদ্দিন খাঁর ব্যবহৃত দুটি সরোদ, দুটি বেহালা, একটি সন্তুর, একটি ব্যাঞ্জো ও একটি সারেঙ্গি, তাঁর হাতে লেখা অন্তত ২৫টি চিঠি, হজের সময় সৌদি আরবের বাদশাহর দেওয়া জায়নামাজ, ব্রিটিশ শাসনাধীন তৎকালীন ভারতের দেশীয় রাজ্য মাইহারের রাজা বৃজনাথ সিং-এর দেওয়া রেওয়াজের দুটি গালিচা, তাঁর নিজের একটি বড়ো ছবি, দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়ক, সরকারপ্রধান ও বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তোলা অন্তত এক হাজার দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র ও আলোকচিত্রের অনুলিপি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

৫ বছর আগের সেই ঘটনায় কোনোক্রমে রক্ষা পেয়েছিল কিছু সামগ্রী। মিউজিয়ামের রক্ষকরা নানা জায়গা থেকে আরও বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহও করেছিলেন। তবে গতকালের অগ্নিকাণ্ডের পর আর কোনোকিছুই অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছেন সঙ্গীতাঙ্গনের প্রশাসনিক কর্তারা। দ্বাররক্ষীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা আগুন নেভানোর উদ্যোগও নিতে দেয়নি। চোখের সামনে সমস্ত সংগ্রহ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে উত্তাল বাংলাদেশ। নানা স্তরের মানুষ বিভিন্নভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু সেই বিক্ষোভের ফলে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার নিন্দা করছেন প্রত্যেকেই।

আরও পড়ুন
আসতেন জগদীশচন্দ্র, বাঘাযতীন; আগুনের গ্রাসে সারদা দেবীর শেষ ঠিকানার একাংশ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আগুনের গ্রাসে রণেশ ঠাকুরের বসতভিটে, কেমন আছে তাঁর সেই হারমোনিয়াম?