পুরনো টিভি সেটই হয়ে উঠছে পথের প্রাণীদের আস্তানা, মানবিক উদ্যোগ আসামের যুবকের

আজকের এলসিডি জমানায় প্রায় অকেজো পুরনো যুগের লম্বা পিকচার টিউব দেওয়া বড়ো বড়ো টিভি। অনেকের বাড়িতেই আজও অবহেলায় পড়ে আছে সেইসব সেট। কেউ বা ফেলেই দিয়েছেন এতদিনে। তবে আসামের শিবসাগর শহরের বাসিন্দাদের কোনো পুরনো জিনিস ফেলতে গেলেই মনে পড়ে অভিজিতের কথা। যুবক অভিজিৎ দুয়ারা বারবার তাঁদের দরজার সামনে হাত পেতে দাঁড়ান। যত্নে সংগ্রহ করে নেন অব্যবহৃত নানা জিনিস। আর ইতিমধ্যে সেইসব জিনিসকে অন্যভাবে কাজে লাগিয়ে বারবার নিজের উদ্ভাবনী বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন তিনি। তৈরি করেছেন ইনকিউবেটর, ইনভার্টার, স্যানিতাইজার সহ নানা জিনিস। তবে তাঁর শেষ উদ্যোগ শুধু উদ্ভাবনী বুদ্ধির নয়, সেইসঙ্গে মানবিকতারও পরিচয় হয়ে উঠেছে।

কিছুদিন আগে বেশ রাত করে বাড়ি ফিরছিলেন অভিজিৎ। তখন সদ্য শীত পড়েছে। আর তার মধ্যেই রাস্তার ধারে দুটি কুকুরছানাকে ঠান্ডায় কষ্ট পেতে দেখে ভারী মায়া হল তাঁর। এদের জন্য কিছুই কি করা যায় না? ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরেই চোখ পড়ল ঘরের এক কোনে রয়েছে ৭টি পুরনো টিভি সেট। নানা মানুষের বাড়ি থেকে এগুলি সংগ্রহ করেছেন তিনি। আর এই টিভি সেটগুলি দেখেই মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। তার স্ক্রিন সরিয়ে, ভিতর থেকে সমস্ত যন্ত্রপাতি বের করে, শুধু খোলটার মধ্যে ভরে দিলেন গরম বিছানা। আর তারপর তাতে হলুদ এবং সবুজ রং করে শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় রাস্তার ধারে বসিয়ে দিলেন অভিজিৎ।

অভিজিৎ এই ছোট্ট ঘরগুলির নাম দিয়েছেন ‘বাটর ঘর’। বাংলা অনুবাদে যার অর্থ হয়, পথের ঘর। অভিজিতের এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মানুষরাও। অনেকেই নিজের বাড়ি থেকে টিভি সেট নিয়ে এসে তার হাতে তুলে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে মেতে উঠেছেন পশুপ্রেমী সংগঠনগুলিও। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকেও তাঁর এই কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে এই শীতের সময়ে পথের ধারে পড়ে থাকা প্রাণীদের জন্য এটুকু করার মধ্যে কোনো মহত্ব নেই বলেই মনে করছেন অভিজিৎ। বরং মানুষ হিসাবে তিনি তো তাঁর দায়িত্বই পালন করেছেন শুধু।

Powered by Froala Editor