জোকার সেজে ইউক্রেনের শিশুদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন এই ব্যক্তি

রাস্তার ধারে কোথাও উপড়ে পড়ে আছে ল্যাম্পপোস্ট। কোথাও আবার ধ্বসে পড়েছে বহুতল। হ্যাঁ, এই দৃশ্যপট ইউক্রেনের। আর এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলেছে একটি ক্লাউন ভ্যান— জোকারদের গাড়ি। ধ্বংসযজ্ঞের আবহে জোকারদের উপস্থিতি খানিকটা অবাক করবে যে কাউকেই! 

জান টমাস রোগালা (Jan Tomasz Rogala)। ইউক্রেনের (Ukraine) পথে পথে টহল দেওয়া ক্লাউন ভ্যানের (Clown Van) নেপথ্যে রয়েছেন তিনিই। ‘ইট’ হোক কিংবা ‘ব্যাটম্যান’— বিভিন্ন চলচ্চিত্রেই জোকার বা ক্লাউনকে উপস্থাপিত করা হয়েছে সুপারভিলেন হিসাবে। চিত্রিত করা হয়েছে তার ভারসাম্যহীন, বিকারগ্রস্ত, হিংস্র চরিত্র। তবে ৫৫ বছর বয়সি টমাসের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। জোকারের ছদ্মবেশেই তিনি হয়ে উঠেছেন ইউক্রেনের সুপারহিরো। ইউক্রেনের নাগরিক না হয়েও, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনীয়দের উদ্ধারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। হাসি ফুটিয়ে তুলছেন উদ্বাস্তু শিশুদের মধ্যে। 

আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। পোল্যান্ড থেকে ইউক্রেনে এসে হাজির হয়েছিলেন টমাস। হ্যাঁ, পেশায় তিনি একজন ক্লাউন। একটা সময় পোল্যান্ডের নানা পার্টিতে কিংবা সার্কাসে খেলা দেখাতেন তিনি। ইউক্রেনে এসে পেশাটা একই থাকল। শুধু বদলে গেল তাঁর উপস্থাপনার ধরন। বিগত দেড় দশক ধরে ডিনিপ্রো শহরের একটি শিশু হাসপাতালে কর্মরত তিনি। কাজ, ক্যানসার ও অন্যান্য দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা। এই কাজে জড়িত হওয়ার পর নিজেই একটি অলাভজনক সংস্থা খুলেছিলেন টমাস। ক্লাউনের প্রশিক্ষণ দেওয়া তো বটেই, পাশাপাশি বিনামূল্যে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অসুস্থ শিশুদের বিনোদনের বন্দোবস্তও করেন তিনি।

বেশ মসৃণভাবেই চলছিল সবকিছু। তারপর মাস তিন আগে হঠাৎ করে বদলে যায় পরিস্থিতি। রুশ আক্রমণ ধেয়ে আসে একের পর এক ইউক্রেনীয় শহরে। বাস্তুচ্যুত হন লক্ষ লক্ষ মানুষ। চাইলেই নিজের দেশ পোল্যান্ডে ফিরে যেতে পারতেন টমাস। তবে তিনি তা করেননি। বরং, নিজের সামান্য ক্ষমতা নিয়েই তিনি নেমে পড়েছেন এই ডামাডোলের মধ্যে। যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের উদ্ধার করতে। 

আরও পড়ুন
এভারেস্টে ইউক্রেনের পতাকা ওড়ালেন রুশ পর্বতারোহী

শুধু টমাসই নয়, তাঁর পরিবার এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থার সদস্যরাও সামিল হয়েছেন এই লড়াইয়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের শহরগুলি থেকে ক্রমাগত তাঁরা উদ্ধার করে চলেছেন অসহায় মানুষদের। তবে তাঁদের দেখে উদ্ধারকর্মী হিসাবে বোঝা দায়। পরনে রয়েছে সেই ঢিলেঢালা ক্লাউনের পোশাক, লাল রবারের নাক। মুখে সাদা-সবুজ রঙের আঁকিবুঁকি। প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে ইউক্রেনীয়দের রেসকিউ সেন্টারে পৌঁছে দেওয়া তো বটেই, একইসঙ্গে বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে ছোট্ট শিশুদের বিনোদনের স্বাদ দিচ্ছেন টমাস এবং তাঁর সহকর্মীরা। গান, অঙ্গভঙ্গি, নানাধরনের খেলার মাধ্যমে হাসি ফুটিয়ে তুলছেন তাদের মুখে। এই দৃশ্যকে বিরল বললেও বোধ হয় কম বলা হয়। টমাসের দৌলতেই খলনায়ক থেকে কখন যেন ত্রাতা হয়ে উঠেছেন ‘জোকার’…

আরও পড়ুন
Cannes-এর দরজা ঠেলে: ইউক্রেনের পরিচালক মাক্সিম নাকোনেশনি-র সাক্ষাৎকার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৩ সপ্তাহ বন্দি পাতালঘরে, রুশ সেনাদের বর্বরতার শিকার তিন শতাধিক ইউক্রেনীয়