খরার বিরুদ্ধে লড়াই ‘ওয়াটার চ্যাম্পিয়ন’ নীতার

গুজরাট উপকূলবর্তী রাজ্য। তা সত্ত্বেও দক্ষিণ গুজরাটের নর্মদা, ভারুচ এবং ডাং জেলার হাল অনেকটা রাজস্থানের মতোই। সারাবছরে সেখানে বৃষ্টিপাতের মাত্রা থাকে মাত্র ১২০-১২৫ ইঞ্চি। গ্রীষ্মে, অর্থাৎ মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। প্রতিবছর স্বাভাবিকভাবেই তীব্র জলসংকট দেখা দেয় এই সময়ে। খরার কারণে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় কৃষি এবং সেচের কাজ।

বছর কয়েক আগে পর্যন্তও এটাই ছিল নর্মদা, ভারুচ এবং ডাং-এর ছবি। তবে বর্তমানে অনেকটাই বদলে গেছে পরিস্থিতি। কমেছে বৃষ্টির ওপর নির্ভরতা। যার নেপথ্যে রয়েছেন গুজরাটের ৪২ বছর বয়সি সমাজকর্মী নীতা প্যাটেল (Neeta Patel)। 

দক্ষিণ গুজরাটের এই তিনটি জেলা মিলিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে ছোটো-বড়ো ৩০০টি আদিবাসী গ্রাম। তেমনই একটি ছোট্ট গ্রাম নবসারির এক কৃষক পরিবারে জন্ম নীতার। আর্থিক অনটন ছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে গ্রীষ্মের দিনগুলোতে যেন চরমে পৌঁছাত অসহায়তা। বৃষ্টির অভাবে বন্ধ হয়ে যেত কৃষিকাজ। পরিবারের উপার্জন-ও। এই ঘটনাই ছোটো থেকে দাগ টেনেছিল নীতার মনে। 

পরবর্তীতে গুজরাট বিদ্যাপীঠ থেকে প্রান্তিক বিদ্যায় স্নাতকতা সম্পূর্ণ করার পর জল সংরক্ষণ নিয়ে শুরু হয় তাঁর লড়াই। সেটা আজ থেকে কুড়ি বছর আগের কথা। জল সংরক্ষণে সচেতনতা গড়ে তুলতে গ্রামে গ্রামে প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল মহিলাদের নিয়ে গড়ে তোলা একটি বিশেষ বাহিনী। মহিলা ক্ষমতায়নের মধ্যে দিয়েই বদলে ফেলা গ্রামের পরিবেশ। 

প্রাথমিকভাবে সাড়া না পেলেও, বিগত দু’দশকে সম্পূর্ণ সাফল্য পেয়েছে তাঁর এই প্রকল্প। গ্রামের আদিবাসী মহিলাদের সঙ্ঘবদ্ধ করে একাধিকবার আন্দোলনের পথে হেঁটেছেন নীতা। সরকারের কাছে বারংবার আবেদন করেছেন ড্যাম নির্মাণ, নদী সংস্করণ, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং কুয়ো খননের জন্য। আজ তাঁর উদ্যোগেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে জল সংকট। উপযুক্ত সেচের সুবিধা পাচ্ছেন ২৫ হাজার কৃষক। ২৩০টির বেশি গ্রামে মিটেছে পানীয় জলের সংকটও। বৃদ্ধি পেয়েছে ভূগর্ভস্থ জলের মাত্রা। 

তবে এখনও থামেননি তিনি। ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অবশিষ্ট গ্রামগুলিতে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তাঁর সঙ্গেই লড়াই করছেন প্রায় ২৯০০ সদস্যের এক বিশাল নারী বাহিনী। খাল খনন এবং সেচ প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরাই। পাশাপাশি নির্মিত ড্যামগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং মেরামতির কাজও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন নীতা। 

সম্প্রতি জল সংরক্ষণে এই অনস্বীকার্য কৃতিত্বের জন্য বিশেষ স্বীকৃতি পেলেন গুজরাটের ৪২ বছর বয়সি জলযোদ্ধা। তাঁর মুকুটে চড়েছে ‘ওয়াটার চ্যাম্পিয়ন’ তকমা। আগামীদিনে তাঁর এই মডেল কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে তামিলনাড়ু কিংবা তেলেঙ্গানার মতো দক্ষিণের খরাপ্রবণ রাজ্যগুলিতেও… 

Powered by Froala Editor