বকাঝকা নয়, মেয়েকে নিজের মতো করেই বড়ো হতে দিয়েছিলেন মমতাশঙ্করের বাবা-মা

শুধুমাত্র উদয়শঙ্কর-অমলাশঙ্করের কন্যা, বা রবিশঙ্করের ভাইঝি পরিচয়েই আটকে নেই তিনি। অভিনয়ের মাধ্যমে, নাচের মাধ্যমে নিজের জায়গা দৃঢ় করেছেন। কিন্তু এই ৬৫ বছরে এসে, এত সাফল্যের মধ্যেও সেই মানুষগুলিকে স্মরণ করতে ভোলেননি মমতাশঙ্কর। নিজের মধ্যেই ধরে রেখেছেন সেই স্মৃতি।

বাবা-মা, দুজনেই ভারতের সংস্কৃতির জগতে কিংবদন্তি। সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ একবার বলেছিলেন, বাংলাকে বিশ্বের দরবারে হাজির করেছিলেন চারজন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন উদয়শঙ্কর। কথাটি অক্ষরে অক্ষরে মানেন মমতাশঙ্কর। তাঁর সঙ্গে বাবা-মা’র সম্পর্কটি ছিল শ্রদ্ধার, বন্ধুত্বের। ছোট থেকেই দেখে এসেছেন নাচের পরিবেশ। বাবা যখন নাচ শেখাতেন ছাত্রছাত্রীদের, সেই রিহার্সালের আসরে গিয়ে নিজেও মনের সুখে নাচতেন তিনি। তাতে বিন্দুমাত্র আপত্তি বা বিরক্তি থাকত না উদয়শঙ্করের মুখে। শুধু বাকিদের বলে দিতেন, ‘ও যা করছে করুক। শুধু খেয়াল রেখো, যাতে পায়ে জড়িয়ে পড়ে না যাও!” ফাইনাল রিহার্সালের সময়ও ডেকে নিতেন তাঁকে। পরবর্তীকালে কলকাতায় উদয়শঙ্করের নাচের অ্যাকাডেমিতেই নৃত্যশিক্ষা শুরু ছোট্ট মমতাশঙ্করের।  

কোনোদিনও হয়তো অভিনয় জগতে আসতেন না। নাচ নিয়েই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে মৃণাল সেনের নজরে পড়লেন মমতাশঙ্কর, অল্প বয়সেই। তারপর ‘মৃগয়া’, বাকি পথটা তারপর নাচ ও অভিনয়— দুটোকেই ভালোবেসে কাছের করে নিয়েছেন। এই অভিনয়তেও নাকি হাত ছিল বাবার। ছোটবেলায় খুব ঘ্যানঘ্যান করলে, ‘ভাল্লাগছে না’ বললে বাবা উদয়শঙ্কর তাঁকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিতেন। বলতেন এই ‘ভাল্লাগছে না’ কথাটা যত রকম ভাবে বলা যায়, সেটা আয়নার সামনে করে দেখাতে। ব্যস, খেলাচ্ছলে এগিয়েও যেত কাজ।

না, কোনদিনও বকাঝকার ধার ধারেননি মা-বাবা দুজনেই। বরং নিজের মতো করে বাড়তে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দিয়েছেন নিজের ওজন, নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার শিক্ষা। সেই শিক্ষাই যে তাঁর সারাজীবনের পাথেয়, সেই কথাই বারবার স্বীকার করেন মমতাশঙ্কর। নিজেও সেই শিক্ষাই দিয়েছেন নিজের সন্তানদের। আজও, নিজের ৬৫তম জন্মদিনে এসে যখন শিব-পার্বতীর প্রাচীন মূর্তি দেখেন, মনে পড়ে যায় উদয়শঙ্কর-অমলাশঙ্করের কথা। যেখানে শুধুই মুগ্ধতা নয়, রয়েছে বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

ঋণস্বীকার—
১) আনন্দবাজার পত্রিকা, রবিবাসরীয় ২০১৮, “মা ভেবেছিলেন, উদয়শঙ্কর দাড়িওয়ালা এক বয়স্ক লোক”
২) আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০১৭, “মন খারাপ হলে রান্না করি”

More From Author See More