সহ্য করতে পারেননি পাখির মৃত্যুদৃশ্য, দেশজুড়ে তৈরি করেছেন ৪০টি বন

এমনিতে তিনি একজন অন্ত্রেপ্রেনর। তাঁর ভরসায় আজ কাজ করছেন ৪৫০ জন মানুষ। আরও নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর বিস্তৃতি। কিন্তু এখানেই থেমে যায় না আর কে নায়ারের গল্প। ভারতের সাতটা রাজ্যে কম করেও করে ৪০টি বন তৈরি করেছেন প্রায় একার হাতেই। তাঁর চোখ দিয়েই সবুজ দেখেছে অনেক অঞ্চল।

ছোট থেকেই কেরালার মনোরম পরিবেশে বড় হয়েছেন আর কে নায়ার। কিন্তু পারিবারিক অবস্থা যে শোচনীয়! গ্রাম ছেড়ে এক সময় চলে যাওয়া ম্যাঙ্গালোরের একটি গ্রামে। বারো ক্লাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। সেটা সত্তরের দশক। যেকোনো তরুণের চোখে ছিল মুম্বাইয়ের স্বপ্ন। মুম্বাই নাকি কাউকে ফেরায় না! ব্যস, সেই স্বপ্নে ভর করে পাড়ি দেওয়া সেখানে…

আরও পড়ুন
একাই লাগিয়েছেন ৫০০০ গাছ, বাঁকুড়ার গ্রামজুড়ে আজ ‘গাছদাদু’র ছায়া

মুম্বাই সত্যিই ফেরায়নি তাঁকে। কাজ করেছেন নানা জায়গায়। গারমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ঢুকেছিলেন সুপারভাইজার হিসেবে। সেখান থেকে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবেও উন্নীত হন। এর পাশাপাশি শুরু করেন সমাজসেবার কাজ। আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনার কাজেও তিনি সাহায্য করতে থাকেন। পরবর্তীতে, চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের একটি কোম্পানি খোলেন, ‘শ্রী পর্নিকা এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড’।

এই সময়ের মধ্যেই আরও একটি ঘটনা ঘটে তাঁর জীবনে। গুজরাটে একটি রাস্তা তৈরির প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর কে নায়ার। নিজের চোখের সামনে ১৭৫টি গাছকে কেটে ফেলতে দেখেন। আরও দেখেন, গাছ থেকে পাখিদের বাসাগুলো পড়ে আছে মাটিতে। বাচ্চাগুলো ছিটকে পড়েছে আশেপাশে। এই দৃশ্য আর নিতে পারেননি তিনি। তখন থেকেই গাছ লাগানোর প্রতিজ্ঞা নেন তিনি।

আরও পড়ুন
বর্জ্য ফেলার জায়গা হয়ে উঠল অরণ্য, কলকাতার বুকে আশ্চর্য কীর্তি আইনজীবীর

প্রথম বন তৈরি করেন তখনই। জাপানি পদ্ধতি ব্যবহার করে এক একর জমিতে তৈরি করেন এই বন। থেমে থাকেননি তারপর। নানা জায়গা থেকে ডাক আসতে থাকে। নিজেও উদ্যোগ নিয়ে করতে থাকেন এসব। মহারাষ্ট্রের একটি রাসায়নিক বর্জ্য ফেলার জায়গার ভোল পাল্টে দিয়েছিলেন। আজ সেটা একটি ক্ষতিকারক আবর্জনাস্থল নয়, ৩২ হাজার গাছের একটি পরিপক্ব একটি জঙ্গল। দূষণ নয়, সেখানে বাসা বাঁধে পাখিরা।

রাজস্থান, গুজরাট, অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সাতটি রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর ৪০টি বন। ছয় লাখের ওপর গাছ রয়েছে সেখানে। তাঁর নিজের তৈরি করা কোম্পানিতে কাজ করছেন ৪৫০ জন কর্মী। সঙ্গে রয়েছে তিন তিনটে ফ্যাক্টরি। এত জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। কিন্তু আর কে নায়ারের দুঃখ একটাই; নিজের জন্মভূমি কেরালা থেকে একবারও ডাক পেলেন না তিনি। সব জায়গায় গাছ লাগিয়েছেন, কেরালা ছাড়া। তবে তিনি থেমে যাননি। আজও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের মতো করে। একদিন সবুজ ভারত দাঁড়িয়ে থাকবে আমাদের সামনে, এমনই স্বপ্ন তাঁর।

Latest News See More