৩ লাখ গৃহহীনকে আশ্রয় দিতে পারে ব্রিটেনের গলফ কোর্স

মাত্র কয়েক মাস আগের কথা। ইংল্যান্ডের সাত লক্ষ পরিবারের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ‘নো ফল্ট’ এভিকশন নোটিশ। মহামারীর মধ্যেই আতঙ্কের শিকার হয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। জরুরি অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে দীর্ঘ দিনের ভাড়া নেওয়া বাড়ি। কোথায় যাবেন তাঁরা? তাঁদের মধ্যে কেউ ভিনদেশের বাসিন্দা, কেউ আবার ব্রিটিশ হলেও নিজস্ব বাড়ি নেই কোনো। ব্রিটেনের এই বাস্তুসমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারে গলফ কোর্স। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধুমাত্র লন্ডনের সরকারি মালিকানাধীন গলফ কোর্সগুলির পর্যাপ্ত ব্যবহারেই বাসস্থান পেতে পারেন ৩ লক্ষ মানুষ। এমনই জানাচ্ছে সেই রিপোর্ট।

ব্রিটিশ স্থপতি এবং ডিজাইন অ্যাডভোকেট রাসেল কার্টিসের প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র ‘গলফ বেল্ট’-এ উঠে আসছে এই তথ্য। দীর্ঘদিন সমীক্ষা ও বিস্তারিত গবেষণার পর লন্ডনের গলফ কোর্সগুলির ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন রাসেল। ‘গলফ কোর্স’-এ উল্লিখিত তথ্য বলছে, ইউরোপের মোট গলফ কোর্সের এক চতুর্থাংশের ঠিকানাই ব্রিটেন। তার মধ্যে অন্ততপক্ষে ৫ শতাংশ রয়েছে শুধু লন্ডনেই। সেক্ষেত্রে, ব্রিটেনের মোট আয়তনের মাত্র ০.৬৫ শতাংশ অঞ্চল বৃহত্তর লন্ডনের অন্তর্গত। ফলত, ইংল্যান্ডের রাজধানীর ভূমি ব্যবস্থাপনার গোড়াতেই যে গলদ রয়েছে, তা স্পষ্ট।

রাসেলের গবেষণা অনুযায়ী, লন্ডনের মধ্যেই রয়েছে ৯৪টি সক্রিয় গলফ কোর্স। যার প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানাধীন। আর এই কোর্সগুলি ব্যবহারকারীর সংখ্যা? ৯০ লক্ষ লন্ডনবাসীর মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন গলফে। তার মধ্যেও একটা বড়ো অংশের মানুষ শুধু মাত্র অর্থের বিনিময়ে খেলতে আসেন কয়েক ঘণ্টার জন্য।

রাসেলের নীল নকশার দাবি, গলফ কোর্সের মধ্যেই তার চরিত্রকে নষ্ট না করে আবাসন গড়ে তোলা সম্ভব। তাতে সার্বিকভাবে খেলাধুলোর পরিসরও যেমন বাড়বে, তেমনই মিটবে উদ্বাস্তু সমস্যাও। রাসেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে লন্ডনের গলফ কোর্স ১৬০০ হেক্টর জমির ব্যবস্থাপনায় আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে ১ লক্ষাধিক মানুষকে।

আরও পড়ুন
হাবল টেলিস্কোপে ধরা দিল দূরতম আইনস্টাইন বলয়

যদিও, রাসেলের দেওয়া এই প্রস্তাব মানতে নারাজ লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। তাঁর কথায় এই গলফ কোর্সই লন্ডনের ঐতিহ্য। পাশাপাশি তা মেট্রোপলিটন ওপেন ল্যান্ড বা মহানগরের উন্মুক্ত জমির অন্তর্গত। ফলত, সেখানে আবাসন নির্মাণ এবং উন্নয়ন আইনের পরিপন্থী। তবে রাসেল জানাচ্ছেন, লন্ডন প্রশাসনের এই যুক্তির ভিত্তি নেই কোনো। কেবলমাত্র আবেগতাড়িত হয়েই এই মন্তব্য সরকারের। এক্ষেত্রে ‘ওপেন ল্যান্ড’-এর মূল আইনি শর্তই দীর্ঘদিন ধরে লঙ্ঘন করে আসছে লন্ডন প্রশাসন। কেন না, এই ‘গ্রিন বেল্ট’-এ অর্থের বিনিময় ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রবেশই নিষিদ্ধ। সেখানে দাঁড়িয়ে গলফ কোর্সের সৃজনশীল এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা গোটা সম্প্রদায়ের কাছেই ব্যবহারের দরজা খুলে দিতে সক্ষম। ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ সরকারের কাছে গলফ কোর্স পুনর্ব্যবহারের এই প্রস্তাব রেখেছেন রাসেল। কিন্তু আদৌ সেই নীল নকশা সাংবিধানিকভাবে গৃহীত হবে কিনা, তা জানা নেই কারোরই…

আরও পড়ুন
করোনাকালে গৃহহীন ইংল্যান্ডের ৭ লক্ষ পরিবার!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গৃহহীন মানুষদের নিজস্ব সংবাদপত্র, উপার্জনের স্বপ্ন ও একটি বিপ্লবের গল্প