বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশের একাধিক জেলা, জলবন্দি ৩ লক্ষ মানুষ

গত মাসের ২৬ তারিখ থেকেই জলমগ্ন বাংলাদেশের একাধিক জেলা। ৬-৭ জুলাই থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি নজরে এলেও, ১১ জুলাই থেকে পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। এখনও অব্দি সেই তান্ডব অব্যাহত। বন্যার কবলে জলবন্দি প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ। সেইসঙ্গে বহু মানুষ বাসস্থান হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৪ লক্ষের বেশি মানুষ এই ভয়াবহ বন্যার শিকার।

প্রথমে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বন্যা শুরু হলেও ক্রমশ জল এগিয়ে আসতে থাকে উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-মধ্য অঞ্চলের জেলাগুলিতেও। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৭টি ইতিমধ্যে বন্যার কবলে। সেইসঙ্গে আগামী ৪-৫দিন বন্যা পরিস্থিতি একইভাবে খারাপের দিকে যেতে থাকলে অন্তত ২৩টি জেলা বন্যার কবলে পড়বে বলে জানিয়েছেন ওয়াটার ডেভালাপমেন্ট বোর্ডের আধিকারিকরা। তার মধ্যে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ এবং জামালপুরের অবস্থা রীতিমতো খারাপ।

প্রায় ২০ দিন ধরে বন্যা চলার পরেও এখনও জল বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা, তিস্তা, ধরলার জল। তবে এবার তিস্তা এবং ধরলার জল কমতে শুরু করবে বলেই মনে করছেন সরকারি কর্মচারীরা। বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনাহারও। যদিও ইতিমধ্যেই সরকারের তরফ থেকে ৩০০টন শুকনো খাবার ও পশুখাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে, তবে আরও অনেক বেশি ত্রাণের প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছেন আধিকারিকরা।

এর মধ্যেই গতকাল রাত থেকে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়েছে বন্যার জল। এক ধাক্কায় জলবন্দি মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে ২ লক্ষ। আপতকালিন পরিস্থিতিতে সরকার ত্রাণ সরবরাহ করলেও তার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় কিছুই নয়। এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার মতো বাড়ি প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানেই গাদাগাদি করে বাস করছেন মানুষ। আবার এর মধ্যেই আছে করোনা সংক্রমণের ভয়।

প্রায় প্রতি বছরই ভারত, নেপাল এবং চিন থেকে বয়ে আসা নদীর জলে বন্যার সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। তবে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮-এর পর এমন বন্যাপরিস্থিতির মুখোমুখি কোনোদিন হতে হয়নি বলেই জানাচ্ছেন অভিজ্ঞ মানুষরা। সেইসঙ্গে পূর্বাভাস অনূযায়ী বন্যা ৪৩ দিন স্থায়ী হলে সেটা একটা রেকর্ড তৈরি করবে। ইতিমধ্যে দেশের ২৫ শতাংশ এলাকা জলমগ্ন। অবশ্য কোনো কোনো বছর এই মাত্রাটা ৪০ শতাংশের উপরেও পৌঁছে যায়। কিন্তু এমন দীর্ঘদিন ধরে ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতির নমুনা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আর দেখেনি।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অসমের বন্যায় বিপর্যস্ত ৩৩ লক্ষ মানুষ, ভাসল কাজিরাঙাও, মৃত ৫০টি বন্য প্রাণী

More From Author See More