সংকটে আফ্রিকা, করোনার পাশাপাশি নাজেহাল পঙ্গপাল ও বন্যাতেও

সমস্ত পৃথিবী যখন করোনা ভাইরাসের ভয়ে তটস্থ, তখনও আফ্রিকা মহাদেশে সংক্রমণের সংখ্যা তুলনায় বেশ কম। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দা প্রভাব ফেলেছে সেখানেও। তাই করোনায় মৃত্যু না হলেও, মৃত্যু ঘটবে অনাহারে। এমনই আশঙ্কা করছেন আফ্রিকার বহু মানুষ। আর সেই আশঙ্কাকেই উস্কে দিয়ে যাচ্ছে সাম্প্রতিক আরও দুটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একদিকে বিধ্বংসী পঙ্গপালের আক্রমণ আর অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যা, করোনা পরিস্থিতিতে এই দুই বাড়তি শত্রুর আগমনে দিশেহারা আফ্রিকা।

কথায় বলে, দুঃসময় কখনো একা আসে না। আফ্রিকা মহাদেশের ক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনই হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আফ্রিকায় প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ পাওয়া যায়। তবে তার পরেও খুব বেশি ছড়ায়নি সংক্রমণ। গোটা মহাদেশে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৫০০০-এর কিছু বেশি। তবে এর মধ্যেই লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। বিপর্যস্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। আর এর মধ্যেই এপ্রিল মাসে আফ্রিকায় হানা দিল মরু পঙ্গপাল। পূর্ব আফ্রিকার অনেকগুলি দেশের ফসল আত্মসাৎ করে তারপর সেই দল হানা দিল আরব হয়ে এশিয়া মহাদেশের দিকে। অবশ্য আফ্রিকাতেও এখনও থেকে গিয়েছে কয়েক দল পঙ্গপাল। আর তাদের উৎপাতে জমির শেষ ফসলের কণাটাও ঘরে তুলতে পারবেন কিনা, ভেবে চিন্তিত কৃষকরা।

আবার শুধুই পঙ্গপাল নয়, এসেছে আরেক উৎপাত। মে মাসের শুরু থেকেই প্রবল বৃষ্টি চলছে পূর্ব আফ্রিকায়। আর তার ফলে জলমগ্ন সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, রোয়ান্ডার মতো বেশ কিছু দেশ। বন্যার প্রকোপে আক্রান্ত অন্তত ১৩ লক্ষ মানুষ। ৫ লক্ষ মানুষ হারিয়েছেন আশ্রয়। এখন এই উপদ্রুত সময়ে কীভাবে সমস্ত সমস্যার সমাধান করা যাবে, সেকথা জানেন না কেউই। এমনিতেই গরিব সেদেশের মানুষ। তার উপর অর্থনীতির যেটুকু কাঠামো দাঁড়িয়ে ছিল, তা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এই ত্রিমুখী আক্রমণে। ফলে দারিদ্র্য আর অনাহার এখন আর খুব দূরের দুঃস্বপ্ন নয়।

সুস্থ স্বাভাবিক সময়েও আফ্রিকার বহু মানুষ খাদ্যের নিরাপত্তা পান না। পৃথিবীর মোট খাদ্য-নিরাপত্তাহীন মানুষের ২০ শতাংশের বাস সেদেশে। তার উপর আক্রমণ শানাচ্ছে সময়। এমন সময়ে বাকি দেশগুলোর সাহায্যই হয়তো আফ্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র রাস্তা। ইতিমধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের তরফ থেকে পঙ্গপাল আক্রান্ত দেশগুলির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে। যার বেশিরভাগটাই পাবে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ। তবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও অনেক বেশি। তাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে প্রত্যেককেই।

Powered by Froala Editor

More From Author See More