দীর্ঘদিনের গৃহবন্দি দশা আর হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। প্রথম দুই পর্যায়ে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক। ভাইরাসবিদ্যা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই নজিরবিহীন সাফল্যের সঙ্গে আবারও জড়িয়ে গেল এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম, আর সেইসঙ্গে এক বাঙালি গবেষকের নামও। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এই বিরাট কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন চন্দ্রাবলী দত্ত। গবেষণা সংক্রান্ত গোপনীয়তার কারণেই এতদিন টিমের কোনো সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে প্রাথমিক সাফল্যের পর টিমের বাকিদের সঙ্গে চ্ন্দ্রার নামও প্রকাশ্যে এসেছে।
৩৪ বছরের চন্দ্রার জন্ম টালিগঞ্জের গল্ফগ্রিন অঞ্চলে। সেখানেই থাকেন তাঁর বাবা সমীরকান্তি দত্ত এবং মা কাবেরী দত্ত। গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল এবং হেরিটেজ ইনস্টিটিউটের পড়াশুনো শেষ করে ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন চন্দ্রা। সেখানে লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশুনো শেষ করে একাধিক ওষুধ নির্মাতা সংস্থায় কাজ করেছেন চন্দ্রা। অবশেষে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং বিভাগে যোগ দেন চন্দ্রা।
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রতিষেধক তৈরির কাজে চন্দ্রার দায়িত্ব ছিল ওষুধের কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্সের দিকে নজর রাখার। যাতে মানুষের শরীরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়। গবেষণাপত্রের খসড়া দেখে একাধিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনও করেছেন চন্দ্রা। আর অবশেষে সাফল্য মেলায় টিমের বাকি সদস্যদের মতোই খুশি চন্দ্রাও। প্রবাসী মেয়ের সাফল্যে খুশি তাঁর বাবা-মাও।
সাধারণত একটা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। অথচ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা মাত্র মাস খানেকের প্রচেষ্টায় এই প্রতিষেধক তৈরি করতে সফল হয়েছেন। এমন দ্রুত ও যুদ্ধকালীন উদ্যোগ বিজ্ঞানের জগতে ঐতিহাসিক তো বটেই, সেইসঙ্গে মহামারীর আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষের মনেও যেন খানিকটা আশার আলো দেখায় এই সাফল্য। তবে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে বাজারে এই প্রতিষেধক আসতে এখনও প্রায় পাঁচ মাস সময় লেগে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চন্দ্রা অবশ্য জানিয়েছেন ইতিমধ্যে পুনা ইউনিটে প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, যাতে ছাড়পত্র পাওয়া মাত্র উৎপাদন শুরু করা যায়। ইংল্যান্ডের ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে এই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন এই পরীক্ষার সাফল্যের দিকেই তাকিয়ে আছেন সকলে। চন্দ্রা ও তার সহকর্মীদের এই সাফল্য তাই যেমন মহামারীর পরিস্থিতিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস, তেমনই বাঙালি হিসাবে গর্বের বিষয়ও বটে।