৩০০-র বেশি প্রাণনাশের চেষ্টা সত্ত্বেও লক্ষ্যে অবিচল কেরালার বনকর্মী

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে একের পর এক বড়ো বড়ো গাছ হারিয়ে যাচ্ছিল কেরালার কোজিকোড অরণ্য থেকে। এর মধ্যে রয়েছে অন্তত ১০০টি রোজউড গাছ। পশ্চিমঘাট পর্বতের অন্যতম সম্পদ এই রোজউড গাছ আজ রীতিমতো বিপন্ন। সারা পৃথিবীজুড়েই তার সংখ্যা কমছে। ফলে নড়েচড়ে বসেছিলেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। তৈরি হয় বিশেষ তদন্তকারী দলও। সম্প্রতি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ২৮ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে বিচারপ্রক্রিয়া। তবে এর মধ্যেই মামলার মোড় ঘুরে যায় এক নতুন দিকে। অভিযুক্ত ৩ জনের মধ্যে রয়েছেন একজন বনদপ্তরের আধিকারিক এবং একজন প্রভাবশালী সাংবাদিকও। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতেই পুলিশের জেরার মুখে তদন্তকারী দলের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন সেই সাংবাদিক। এমনকি তাঁদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মূলত কেরালা বনবিভাগের বিভাগীয় আধিকারিক ধনেশ কুমার এবং কর্ণাটক বনবিভাগের সমীর এমকের তৎপরতাতেই ধরা পড়েছেন অভিযুক্তরা। স্বাভাবিকভাবেই হুমকির মূল লক্ষ্য তাঁরা। ইতিমধ্যে সমীরের বিরুদ্ধে দেশের বনজ সম্পদ বাইরে পাচার করে দেওয়ার একটি মামলাও শুরু হয়েছে। আর সেই মামলার বাদী পূর্ববর্তী মামলার অভিযুক্ত বনাধিকারিক এনটি সজন। স্বাভাবিকভাবেই দুই মামলার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এবং সমীরের বিরুদ্ধে মামলা আসলে পরিকল্পিত এবং মিথ্যা বলেই মিথ্যা – ধারণা এমনটাই। ধনেশ কুমারের বিরুদ্ধে যদিও এখনও তেমন কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। বরং তিনি নিজেই এই হুমকির বিষয়টি নিয়ে একটি সিট পিটিশন জমা করেছেন।

তবে ধনেশ কুমারকে হুমকি এবং হত্যার চেষ্টা এই প্রথম নয়। ২০০৬ সাল থেকেই একাধিকবার এমন ঘটনার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে। ২০০৫ সালে কেরালা রাজ্য বনবিভাগের একজন অধস্তন অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দেন ধনেশ। সেইসময় গোটা রাজ্যজুড়ে চোরাশিকারীদের উপদ্রব চলছে। ধনেশ তাঁর নিজের দল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন অপরাধ দমনের কাজে। দপ্তরের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মচারী সাহায্য করলেও বিরোধীরও অভাব ছিল না। শেষ পর্যন্ত বছর তিনেকের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ধনেশ। তবে তার মধ্যেই অন্তত ১০০ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবারই সহকর্মীদের তৎপরতায় রক্ষা পেয়ে যান তিনি। এরপর আরও নানা মামলায় প্রথম সারিতে থেকে তদন্ত করেছেন তিনি। ২০১২ সালে রাজ্য বনবিভাগের তরফ থেকে বিশেষ সম্মানও পেয়েছেন। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি কমেনি একটুও।

এখনও পর্যন্ত তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৩০০ বারেরও বেশি। ২০১৬ সালে তিনি মামলা শুরু করেন খোদ এক পরিবেশ সংরক্ষকের বিরুদ্ধে। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য একটি এনজিও চালাতেন সেই ব্যক্তি। অথচ তিনিই প্রকাশ্য রাস্তায় একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতিকে হত্যা করেন। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। সেই সময় বনবিভাগের বেশ কিছু অফিসার ধনেশের বিরোধিতা করেন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে চাকরি থেকে অপসারণের চেষ্টাও করা হয়। তবু নিজের কর্তব্যে অবিচল ধনেশ কুমার। তাঁর মতো অসংখ্য বনকর্মীই তো রক্ষা করে চলেছেন আমাদের হারিয়ে যেতে বসা অরণ্য অঞ্চলকে। বর্তমান সময়ে ধনেশের মতো যোদ্ধাদের সত্যিই ভীষণ প্রয়োজন।

আরও পড়ুন
মানুষ ও চিতাবাঘের সহাবস্থান সম্ভব, ভরসা যোগাচ্ছে পরিবেশ সংস্থা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ঠুড়গা পাওয়ার স্টোরেজ প্রকল্পে ধ্বংস হবে প্রস্তরযুগের প্রত্নক্ষেত্রও, সরব পরিবেশকর্মীরা