রক্তক্ষয়ী মোড় নিতে পারে বাংলার রাজনীতি, সতর্ক করছেন সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা

বাংলাজুড়ে চলছে নির্বাচনীযুদ্ধ। ইতিমধ্যেই ভোট সম্পন্ন হয়েছে চারটি পর্বে। কিন্তু তারপরেও লোহিততপ্ত হয়ে আছে বাংলার পরিস্থিতি। দলীয় সংঘর্ষ কথা নয় বাদই দেওয়া যাক। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৫ জন মানুষ। অন্যান্য ভোটের তুলনায় চলতি বিধানসভা নির্বাচনের গুরুত্ব বা উত্তাপ যে বহু অংশে বেশি, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। চলছে এক নোংরা বিভাজনের রাজনীতি। তবে এই একাধিপত্যের বিরুদ্ধেই একজোট হয়েছেন বাংলার নবীন-প্রবীণ বুদ্ধিজীবীরা। এবার আরও একবার বর্ণবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও মিথ্যাচারের কথা মনে করিয়ে, সাধারণ মানুষকে হুঁশিয়ার করলেন সাংবাদিক, লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা।

“দিকে দিকে হও হুঁশিয়ার রাখতে মাথা উঁচু
খাল কেটে কুমির ঘরে আসছে পিছু পিছু…” 

নিশানা বিরোধী-মুক্ত একছত্র রাজপাটের দিকে। গানকে হাতিয়ার করে নিয়েই ‘ফ্যাসিবাদ’-কে বিঁধেছেন সঞ্জয় গুহঠাকুরতা। সম্প্রতি তাঁর পরিচালনা ও প্রযোজনা করা এই গানের ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে ইউটিউবে। গানটির রচয়িতা স্যমন্তক সিনহা। তাছাড়াও একাধিক শিল্পী জড়িয়ে রয়েছেন এই প্রতিবাদী গানটির সঙ্গে। 


তবে শুধু গানেই নয়। চলতি মাসের শুরু থেকেই ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা। শুধু গান দিয়েই নয়, বরং একটি স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে তাঁর পরিচালিত ভিডিও সিরিজ মনে করিয়ে দিচ্ছে বিভাজনের রাজনীতির ইতিহাসকে। উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পরিণতি ঠিক কী হয়েছিল আজ থেকে কয়েক দশক আগে, দাঙ্গার ছবিই বা কতটা ভয়াবহ হতে পারে— সেসবেরই বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরছেন তিনি। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য পাশে রেখে, চোখে আঙুল দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন এই আসন্ন পরিবর্তনের হাওয়া ঠিক কোন মোড় আনতে চলেছে বাংলায়। 

“এই কাজটা করার পরিকল্পনা ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু আর্থিক কারণেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি তখন। নির্বাচনের অন্তত মাসখানেক আগে থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল”, আক্ষেপের সুর শোনা গেল পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার কণ্ঠে। তবে তিনি আশ্বাস দিলেন, আগামীতে ধারাবাহিকভাবেই আসতে চলেছে আরও এই ধরণের সচেতনতামূলক ভিডিও।

বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা। তাঁকে দেখা গেছে লেখক, পরিচালক, সাক্ষাত্কারকারী, শিক্ষক, ভাষ্যকার, প্রকাশক এবং প্রযোজকের ভূমিকায়। বাংলা, হিন্দি ও ইংরাজি— তিন ভাষাতেই সাংবাদিকতা করেছেন তিনি। তাঁর কলমে অন্য মাত্রা পেয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। 


বাংলার এই অস্থিতিকর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কী মনে করছেন পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা? “আমদের মতো রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও সন্দিহান, কী হতে চলেছে বাংলার ভবিষ্যৎ। কেউ-ই সাহস করে বলতে পারছি না এই লড়াইয়ের ফলাফল ঠিক কোনদিকে যাবে। আমি শুধু কয়েকটা প্রশ্ন তুলে দিতে পারি বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে। প্রথমত, তৃণমূল বিরোধী ভোটটা কোথায় যাবে? সেটা কি বিজেপি আর বাম-কংগ্রেস জোটের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেলে রাজ্যের শাসকদের সুবিধা হবে? একইভাবে সংখ্যালঘু ভোটটা তৃণমূল ও জোটের মধ্যে বিভাজিত হয়ে বিজেপির সুবিধা করে দেবে না তো?”, বলছিলেন পরঞ্জয়বাবু। পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে পরঞ্জয়বাবু জানালেন, রাজ্যের ৪০.২ শতাংশ ভোটই গতবার গিয়েছিল বিজেপির দিকে। ফলত বাকি ৬০ শতাংশ ভোট ঠিক কীভাবে ভাগ হয়ে যাবে অন্য বড়ো দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে— তা-ই নির্ধারণ করবে বাংলার ভাগ্য।

হ্যাঁ, পশিচবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনই এক দোলাচলে। আর শুধু বাংলা নয়, এই নির্বাচনের প্রভাব পড়তে চলেছে গোটা দেশের রাজনীতিতেই। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও আসন সংখ্যা বৃদ্ধিতেও নিশ্চিতভাবে লাভবান হবে বিজেপি সরকার। তবে পাঁচ বছরের জন্য অন্তত বাংলাতে তাদের রুখে দেওয়া গেলে, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারবে না হিন্দু জাতীয়তাবাদ। সে বিষয়েই সতর্ক করছেন তিনি। শিল্প-সংস্কৃতি-ইতিহাসকে হাতিয়ার করে এক ছাতার তলায় আনতে চাইছেন বাংলার উদারপন্থীদের। এখন দেখার জাতীয়তাবাদী এই ঝড়কে আটকাতে কতটা তৎপর হয়ে ওঠে বাংলার সাধারণ মানুষ। সেই উত্তর মিলবে মে মাসের ২ তারিখ…

Powered by Froala Editor