ড্রাগনফ্লাই-৪৪ গ্যালাক্সিতে ওয়ার্মহোলের সন্ধান দিলেন যাদবপুরের শিক্ষক ও গবেষক

মহাকাশের দূরতম দুই প্রান্তে দুটি বিন্দু। আলোর গতিবেগেও এই দূরত্ব যেতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু এমন কোনো বিকল্প পথ কি আছে, যাতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এই দূরত্ব অতিক্রম করা যায়? আইনস্টাইনের ফিল্ড ইক্যুয়েশন বলে, হ্যাঁ অবশ্যই এমন পথ আছে। যদিও সেই তত্ত্ব বাস্তব নাকি কোনো গাণিতিক ভ্রান্তি, এই নিয়ে বিজ্ঞানীদের দ্বন্দ্বের শেষ ছিল না। অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ডঃ ফারুক রহমান এবং গবেষক সইদুল ইসলাম সেই বিতর্কের উত্তর দিলেন। এবং অঙ্ক কষে তাঁরা দেখিয়ে দিলেন বছর চারেক আগে আবিষ্কৃত ড্রাগনফ্লাই-৪৪ গ্যালাক্সির মধ্যে সেই বিকল্প পথ অর্থাৎ ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ব আছে। সম্প্রতি ‘কানাডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের এই গবেষণাপত্র।

২০১৪ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই ডঃ ফারুক রহমান দেখিয়েছিলেন, যে কোনো গ্যালাক্সির মধ্যেই ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। অবশ্য কোনো নির্দিষ্ট গ্যালাক্সির তথ্য হাতে না থাকায় সেখানেই সিদ্ধান্ত শেষ করতে হয়েছিল। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীমহলে এই গবেষণা সাড়া ফেলে দিয়েছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় ডঃ ফারুক রহমানের নাম এনে দেয় এই গবেষণা। আর এর মধ্যেই ২০১৬ সালে ড্রাগনফ্লাই-৪৪ গ্যালাক্সি আবিষ্কারের পর নতুন করে গবেষণা শুরু করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে সইদুল ইসলাম ছাড়াও যোগ দেন তুরস্কের ইস্টার্ন মেডিটেরানিয়ান ইউনিভার্সিটির আলি অভগুন এবং মুস্তাফা হালিলসয়। অবশেষে প্রায় ২ বছরের গবেষণার শেষে তাঁরা অঙ্ক কষে দেখালেন এই নতুন আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিতেও ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ব আছে।

ডঃ ফারুক রহমান বলছেন, “ড্রাগনফ্লাই-৪৪ মূলত ডার্ক ম্যাটার দিয়েই তৈরি। এর মাত্র ১ শতাংশ পদার্থ থেকে আলো আসে। ফলে গবেষণার সময় বেশ কিছু মডেল ব্যবহার করতে হয়েছে।” আপাতত শুধুই গাণিতিক প্রমাণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই ওয়ার্মহোল দিয়ে যাত্রা ঠিক কেমন হতে পারে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা একরকম অসম্ভব। 

সত্যিই কি সময়ভ্রমণ হতে পারে? এর উত্তর পেতে হাতে-কলমে পরীক্ষা প্রয়োজন। ডঃ ফারুক রহমানের কথায়, “আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পরীক্ষা তো দূরের কথা, পর্যবেক্ষণের পরিকাঠামোও নেই। আমাদের তাকিয়ে থাকতে হয় বিদেশের ইউনিভার্সিটি বা গবেষণা সংস্থাগুলির দিকে।” তবে এ-সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁদের গবেষণা সফল হয়েছে। আর ভবিষ্যতে এই গবেষণাই যে পদার্থবিজ্ঞানের ধারণায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিতে চলেছে, সেটা বলাই বাহুল্য। আবারও একবার বিজ্ঞানের জগতে যুগান্তর ঘটাল শহর কলকাতাই।

Powered by Froala Editor

More From Author See More