মাত্র এক ইউরোতেই বাড়ির মালিকানা, ইতালির এই শৈলশহরে থাকতে পারেন আপনিও

পাথুরে দেওয়ালের বয়স প্রায় একশো বছর। ভেতরে সাজানো বেডরুম, ব্যালকনি, কিচেন, বাথরুম— সবই রয়েছে পছন্দ মতো। জানলা খুললেই মনোরম প্রাকৃতিক পার্বত্য দৃশ্য আর ইতিহাসের হাতছানি তো উপরি-পাওনা। শতাব্দীপ্রাচীন এমন সব ঐতিহাসিক নির্মাণের মধ্যে রাত কাটানো এক প্রকার সৌভাগ্যই বলেই মনে করবেন যে কেউ। আর যদি সেই বাড়িটার খোদ মালিকই হয়ে যান আপনি, তবে?

হ্যাঁ, এমনটাই হচ্ছে ইতালিতে। রোমের দক্ষিণ-পূর্ব প্রায় ১৪০ কিমি দূরে ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম ক্যাস্ট্রোপিগনানো। মূলত পরিত্যক্ত হয়েই বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে এই ছোট্ট মধ্যযুগীয় নগরী। শহর জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে দুর্গ আর যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। তবে অধিকাংশ আবাসস্থলই একেবারে অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এখনও। এবার সেইসব বাড়িগুলির জন্য নতুন মালিকের খোঁজ শুরু করল ইতালি সরকার। দাম? শুনলে চমকে উঠবেন নিশ্চয়ই। এক ইউরো অর্থাৎ প্রায় ১০০ টাকাতেই নিলামে উঠছে এইসব মধ্যযুগীয় সাবেকি বাড়িগুলি! কিনতে চাইলে কেবলমাত্র একটি মেল করলেই হবে শহরের মেয়র নিকোলো স্ক্যাপিলতিকে।

ক্যাস্ট্রোপিগনানোকে পুনরায় জনবসতিপূর্ণ শহর হিসাবে গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ ইতালি সরকারের। সব মিলিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে প্রায় ১০০টি পরিত্যক্ত বাড়িকে। প্রতিটি বাড়ির সমস্ত বৈশিষ্ট্যের বিষদ বিবরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে ক্যাটালগও। নতুন মালিকদের যাতে পছন্দের ঠিকানা খুঁজে নিতে অসুবিধা না হয়, সে জন্যই এই প্রয়াস।

তবে শুধুমাত্র জনবসতি গড়ে তুললেই তো হয় না। সেইসঙ্গে বন্দোবস্ত করতে হবে নিত্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানের। ব্যবসায়িক দিক থেকেও যাতে এগিয়ে আসেন মানুষ, সেই রাস্তাও খোলা রেখেছে ইতালি সরকার। তবে শর্ত একটাই। মালিকানা পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে নিজ উদ্যোগে সংস্করণ করতে হবে বাড়িগুলির। অথবা চাইলে সরকারের কাছে জমা রাখতে পারেন ২০০০ ইউরো বা লাখ দুয়েক টাকা। সরকারই পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্করণ করে আপনার হাতে তুলে দেবে সেই বাড়ি।

কিন্তু হঠাৎ এই ধরণের সিদ্ধান্তের পিছনে কারণ কী? পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৩ হাজারের কাছাকাছি। তারপরেই শুরু হতে থাকে জনসংখ্যা হ্রাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাজ কিংবা নিরাপত্তার খোঁজেই অধিকাংশ বাসিন্দা বাড়ি খালি রেখেই চলে যায় এই অঞ্চল থেকে। যার ফলে আজ জনসংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯০০-তে। তাও তাঁদের ৬০ শতাংশেরও বেশি ব্যক্তির বয়স সত্তরোর্ধ্ব। প্রায় গোটা শহর জুড়েই বিরাজ করছে শ্মশানের নীরবতা। 

আরও পড়ুন
সুদূর ইতালিতে বাঙালির স্পর্ধা, ভিলা রোমানা-য় প্রতিনিধিত্ব শূন্য দশকের কবিদের

ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যবাহী এমন একটি শহর জনহীন থেকেই গুরুত্ব হারাবে তার, এমনটা একেবারেই চান না মেয়র নিকোলো। গত অক্টোবর মাসেই তাই বাড়িগুলির পুরনো মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। অনুরোধ জানান, বাড়িগুলির পুনর্নির্মাণ এবং নতুন করে বসতিস্থাপনের জন্য। আর তা যদি না সম্ভব হয়, তবে তাঁরা যেন বাড়ির স্বত্ব তুলে দেয় সরকারের হাতে। হয়েওছে তেমনটাই। অধিকাংশই আগ্রহ দেখাননি এই শহরে নতুন করে ফিরে আসতে।

নিকোলো আশাবাদী, এই উদ্যোগে সাড়া মিলবে ব্যাপকভাবে। অন্তত নতুন করে ৫০টি পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যাবে এই প্রকল্পে। নতুন করে গড়ে তোলা যাবে পর্যটন শিল্পকেও, মনে করছেন তিনি। ইতিমধ্যেই এসেছে বেশ কিছু ইমেলও। চারিদিকে সবুজে ঘেরা জমি, পাহাড়ের আমেজ, মেঘের রাজ্য, আর খানিকটা দূরেই সমুদ্রের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেমিটি দ্বীপপুঞ্জ— এক কথায় যেন সব মিলিয়ে স্বর্গরাজ্য। কী ভাবছেন? এবার পাকাপাকিভাবে ক্যাস্ট্রোপিগনানোতেই বদলে নেবেন ঠিকানা? দেখতেই পারেন একটা সুযোগ নিয়ে। সাধ্যের খরচে এমন রূপকথার শহরে থাকতে পারার সুবর্ণ সযোগ কিন্তু আর আসবে না...

আরও পড়ুন
সাদা বরফের ওপর ছড়িয়ে গোলাপি আভা, ইতালির হিমবাহের অবস্থায় চিন্তিত বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor