মহামারীর জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’, ঘরে বসেই মাধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার নিউটনের

চারিদিকে রোগ গিজগিজ করছে। কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে আপনি আপাতত নিজের ঘরেই আশ্রয় নিয়েছেন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম! এখন এই ঘরে থেকে কাজ করতে করতেই যদি যুগান্তকারী কিছু আবিষ্কার করে ফেলেন? নিজের প্রতিভার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যান? পাগলের প্রলাপ বকা হচ্ছে না। সত্যিই এমনটা হয়েছিল পৃথিবীতে; অন্তত আইজ্যাক নিউটনের ক্ষেত্রে তো কথাটি খাঁটি সত্যি!

চারিদিকে রোগ আর রোগ। তার মধ্যেই ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন নিউটন। সেই সময়ই আবিষ্কার করে ফেললেন একের পর এক তত্ত্ব! ব্যাপারটা একটু গোড়া থেকে বলা যাক। সালটা ১৬৬৫। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এই সালটি অন্যতম কালো সাল। শুধু ইংল্যান্ড কেন, পৃথিবীর ইতিহাসেও। মানুষে-মানুষে যুদ্ধ নয়; এই লড়াই প্লেগের সঙ্গে। গোটা লন্ডন, ইংল্যান্ড ছারখার হয়ে গিয়েছিল এই রোগের আক্রমণে। ‘দ্য গ্রেট প্লেগ অফ লন্ডন’। মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। চারিদিকে হাহাকার; বন্ধ হতে থাকে সমস্ত স্কুল, কলেজ, অফিস।

আইজ্যাক নিউটন তখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র। সদ্য স্নাতক পাশ করে আরও পড়ার কথা ভাবছেন। শুরুও করে দিয়েছিলেন। এমন সময় দেখা দিল মারণ প্লেগ। ছাত্র, শিক্ষকদের সুরক্ষার জন্য বন্ধ হল কেমব্রিজ, ট্রিনিটি। ব্যস, নিউটন হয়ে পড়লেন ঘরবন্দি। তবে পড়া বা কাজ থামল না। বলা ভালো, ওয়ার্ক ফ্রম হোম! সেটাই শাপে বর হয়ে দাঁড়াল তাঁর কাছে। ইতিহাস বলে, এই সময়টাই নিউটনের জীবনের সবচেয়ে ফলপ্রসূ মুহূর্ত। একের পর এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞানের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় গেছেন; ডুব দিয়েছেন আর তুলে এনেছেন যুগান্তকারী সব আবিষ্কার। মাধ্যাকর্ষণের ধারণা এবং তাঁর সূত্রও এই সময়ই আবিষ্কার করেন তিনি। সেই আপেল বাগান! এছাড়াও, অঙ্কের ক্যালকুলাস, আলোবিজ্ঞান বা অপটিকস-সহ একের পর এক জিনিস আমাদের সামনে আনেন। নিজেকে সর্বস্ব দিয়ে উজাড় করে দেন। এটাই তো অমর হওয়ার সময় তাঁর!

তাঁর এই ঘরবন্দি থাকার সময় যাবতীয় গবেষণা বাইরে আসার পর সবাই চমকে যান রীতিমতো। ফলস্বরূপ, কেমব্রিজে ফেরার পর তিনি নিজের কলেজেই অধ্যাপক হয়ে যান; ফেলোশিপও পান। আপনিও বাইরে একদম না বেরিয়ে, বাড়িতে থেকে কাজে মন দিন ভালো করে। মাধ্যাকর্ষণের সূত্র হয়তো হবে না; নিজের মতো করে সেরাটা তো দিতেই পারবেন। কে জানে, যদি কিছু হয়ে যায়!

Powered by Froala Editor

Latest News See More