প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ মহিলা হিসেবে দক্ষিণ মেরু জয়ের পথে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রীত

পৃথিবীতে উঁচু উঁচু শৃঙ্গ প্রচুর আছে, কিন্তু মেরুজয় আজও সমস্ত অভিযাত্রীদের কাছে এক স্বপ্নের বিষয়। পুরুষদের মেরুজয়ের বহু নজির যদিও ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, তবে একজন মহিলার মেরুজয় আজও অবাক করে। ১৯৯৪ সালে নরওয়ের মহিলা অভিযাত্রী লিস আরনেসিন পা রাখেন দক্ষিণ মেরুতে। এর পর থেকে এখনও অবধি মাত্র ৩ জন মহিলা দক্ষিণ মেরু জয় করেছেন। তবে তাঁরা প্রত্যেকেই শ্বেতাঙ্গ। প্রথন ভিন্ন বর্ণের মহিলা হিসাবে আন্টার্কটিকার একেবারে কেন্দ্রে (South Pole) পা রাখতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণী প্রীত চণ্ডী (Preet Chandi)। অভিযাত্রী হিসাবে তাঁর এই পদক্ষেপ যেমন সাহসী, তেমনই অবাক করা তাঁর পরিচয়। তিনি ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনীর একজন শিখ যোদ্ধা।

৩২ বছরের প্রীত চণ্ডীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের ডার্বি শহরে। স্কুল শিক্ষার সময় থেকেই খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। টেনিস খেলার জন্য আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। এরপর প্যারামেডিক্যাল কোর্স করতে করতেই ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন প্রীত। সেইসঙ্গে বাড়তে থাকে তাঁর অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছাও। সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে পোলার এক্সপ্লোরার বলে পরিচয় দেন প্রীত। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু বিরূপ সমালোচনাও শুনতে হয় তাঁকে। যেহেতু তিনি নিজে দুই মেরুতে পা রাখেননি, তাই নিজের এমন পরিচয় দেওয়ায় আপত্তি জানিয়েছিলেন অনেকেই। তাঁদের জবাব দিতে দীর্ঘদিন ধরেই আল্পস পর্বতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন প্রীত। কিন্তু কোভিড অতিমারীর কারণে অভিযানের দিন পিছিয়ে যেতে থাকে।

প্রথমে দক্ষিণমেরু জয় করার পরেই উত্তর মেরুতে পা রাখার ইচ্ছা ছিল প্রীতের। কিন্তু যেহেতু দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছতে গেলে চিলি হয়ে যেতে হবে, এবং অতিমারীর কারণে চিলিতে বিদেশীদের প্রবেশ নিষদ্ধ ছিল, তাই গতবছরই গ্রিনল্যান্ড থেকে ২৭ দিন ট্রেক করে উত্তরমেরুতে পৌঁছান প্রীত। এবার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরায় চিলি তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে। প্রীত নিজেও অভিযানের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আর তাই ১ নভেম্বর চিলি থেকে বিমানে আন্টার্কটিকার হারকিউলাস ইনলেটে পৌঁছেছেন তিনি। এখানে থেকে প্রায় ৪৫ দিন ট্রেক করে পৌঁছাতে হবে দক্ষিণ মেরুতে। যদিও আন্টার্কটিকায় এখন গ্রীষ্মকাল, তাই সারাদিনই আকাশে সূর্য রয়েছে। তবে উষ্ণতা কখনও কখনও -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে এই অভিযান একেবারেই সহজ নয়। তবে প্রীত সফল হলে তাঁর সাফল্য আরও অনেক মহিলা অভিযাত্রীকে, বিশেষত ভারতীয় মহিলা অভিযাত্রীদের স্বপ্ন যোগাবে বলে আশাবাদী তিনি। দক্ষিণমেরু থেকে ফিরে এই উদ্দেশ্যে একটি ফান্ড গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আছে তাঁর।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
২৫৬ বছরের পুরনো মেরু-বাতাস দিয়ে ভাস্কর্য!

More From Author See More