উপসর্গ হাঁচি-কাশি, মারণ ভাইরাস হানা দিয়েছিল ব্যাটম্যানের শহরেও

নতুন এক ভাইরাস থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কাতারে কাতারে লোক। হাসপাতালগুলি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অপ্রস্তুত রাজনৈতিক দলগুলিও। মর্গে দেহ রাখার জায়গা নেই। রেফ্রিজারেটেড ট্রাকে শবের উপর শব চাপিয়ে চালান করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে নাগাড়ে আবেদন জানানো হচ্ছে নাগরিকদের কাছে, সচেতন থাকার জন্য। চেনা-পরিচিত লাগলেও কথাগুলো কিন্তু বর্তমানের নয়। বরং ২৪ বছর আগের। ঘটনাস্থল, গথাম শহর।

‘এটা বীভৎস! একটা অসুখের সঙ্গে কী করে লড়াই করব আমি? আর আমি যদি সেটা না পারি, গথাম তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে!’

বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, বক্তা কে হতে পারেন। গথামের বরাবরের রক্ষাকর্তা সেই কোটিপতি ব্যবসায়ী ব্রুস ওয়েন, সারা পৃথিবী যাকে চেনে ‘ব্যাটম্যান’ নামে। বর্তমানে সারা পৃথিবী যখন মহামারী সামলে স্বাভাবিক হওয়ার পথে হাঁটছে, তখনই আবার দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফেরত আসার ভয় দেখাচ্ছে মারণ ভাইরাস। করোনাভাইরাসের মতোই নানা সময় ইতিহাসে এরকম মহামারী দেখা গিয়েছে আরও বেশ কয়েকবার। কমিক্সের পোকাদের তাই জানতে বাকি নেই যে, স্বয়ং ব্যাটম্যানের শহরেও হানা দিয়েছিল অতি ভয়ঙ্কর এক মারণ ভাইরাস। শুধু তাই নয়, তাতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণও যেতে বসেছিল ব্যাটম্যান কমিক্সের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র রবিনের।

ব্যাটম্যানের সেই কমিক্সের নাম ছিল ‘কন্টাজিয়ন’ যার বাংলা অর্থ ‘সংক্রামক’। ১৯৯৬ সালের মার্চ থেকে এপ্রিল মাস অবধি এই কমিক্স সিরিজটি দাপিয়ে বেড়িয়েছিল বাজারে। একাধিক লেখক এবং অঙ্কন শিল্পী ব্যাটম্যানের এই সিরিজটির লেখা এবং অলংকরণের দায়িত্বে ছিলেন।

অদ্ভুতভাবে ব্যাটম্যানের এই কমিক্সের গল্পের সঙ্গে মিল রয়েছে বর্তমান সময়ের। গল্পে দেখা যাচ্ছে যে, গথাম সিটি জুড়ে ভয়ঙ্কর ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ইবোলা ভাইরাস। এর ফলে আজরায়েল, ব্যাটম্যান, ক্যাটওম্যান, হান্ট্রেস, নাইটউইং এবং রবিন এমন একটি হুমকির মুখোমুখি হয়েছে যেখানে শত্রুকে চোখে দেখা যায় না।

গল্পের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে দেখা যায়, শহরে ভয়ঙ্কর মারণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পরিষ্কার হচ্ছে অর্থনৈতিক বিভাজন। শহরের ধনী বাসিন্দারা মনে করছেন যে, তারা যদি নিজেদের গৃহবন্দি অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইন করে রাখেন, তাহলে প্লেগের জীবাণু আর ছড়িয়ে পড়তে পারবে না তাদের মধ্যে। অথচ ভাইরাসের চোখরাঙানি দূর হয় না, কারণ সেই ধনী সম্প্রদায়ের মধ্যেই একজন বাহক বা ক্যারিয়ার থাকেন প্লেগের।

আরও পড়ুন
সমাজের গালে থাপ্পড় মারতে কার্টুনই হাতিয়ার গগনেন্দ্রনাথের

কমিক্সের গল্পে ভাইরাসটিকে ডাকা হয়েছে 'দ্য ক্লিঞ্চ' বলে। কোভিডের মতোই এর উপসর্গ হিসাবেও দেখা দিত কাশি বা হাঁচি।  তারপরেই চোখ ও মুখ থেকে রক্তপাত শুরু হত। এর ফলে মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ১০০ শতাংশ।

গল্পে শেষ অবধি ভাইরাসকে সামাল দিতে সমর্থ হলেও বর্তমানে মুক্তির পথ এখনও মেলেনি। সাধারণ মানুষ চাতকের মত তাকিয়ে আছেন ভ্যাকসিনের দিকে। পরিস্থিতি আরও খারাপ করে পুনরায় লকডাউনের পথে হেঁটেছে ব্রিটেন। তাই অবাস্তব লাগলেও বলতে ইচ্ছে করে, এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটম্যানের মতো একজন সুপারহিরো এসে দাঁড়ালে মন্দ হত না মোটেই! কারণ ভাইরাস মোকাবিলায় এমন দক্ষতা তো অন্য কোন সুপারহিরোর নেই!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কার্টুনের লড়াই নেমে আসত ময়দানেও, বে-ব্লেড ও আমাদের হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা

More From Author See More

Latest News See More