মহেন্দ্রলালের বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে হিন্দি-আগ্রাসন, নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক

গবেষণাক্ষেত্রে ভাষার রাজনীতি নতুন ঘটনা নয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বা সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছিলেন মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার কথা। আর সাময়িক সময়ে ভাষারাজনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হিন্দি-আগ্রাসনের প্রশ্নটিও ঢুকে পড়ল খোদ কলকাতার বুকেই। ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশিকাকে ঘিরে এই অভিযোগই উঠছে প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও।

“কালটিভেশন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগ গবেষক ও অধ্যাপকই বাঙালি। আর বাঙালি ছোটো থেকে হিন্দি সিনেমা দেখলেও, হিন্দি গান শুনলেও সেই ভাষায় লিখতে বা পড়তে অভ্যস্ত নয় কখনোই। ফলে একটা সমস্যা তৈরি তো হবেই।” বলছিলেন রসায়ন বিভাগের এক গবেষক। তবে তিনি জানালেন, গবেষণার কোনো কাজ হিন্দিতে করতে হবে, এমনটা বলা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সমস্ত আনুসাঙ্গিক কাজের ৫৫ শতাংশ করতে হবে হিন্দি ভাষায়। এর মধ্যে সমস্ত আভ্যন্তরীণ নথি ও চিঠিপত্রের বিষয়টি থাকছে।

কালটিভেশনের অ্যাক্টিং রেজিস্ট্রার পূর্বাশা ব্যানার্জি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, সমস্ত ফাইলের নামকরণের ক্ষেত্রেও ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিতে লিখতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে হিন্দি নাম প্রথমে থাকবে, ইংরেজি তার পরে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রের সরকারি ভাষা বিভাগের রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই নির্দেশিকা পাঠিয়েছে খোদ কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর। ফলে এই নির্দেশিকার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে। তা অমান্য করার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।

এক গবেষকের কথায়, “আমাদের বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানে একজন হিন্দি অফিসার আছেন। কোনো অসুবিধা হলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ফলে গবেষণার বাইরের ঝামেলা একটু বাড়ল। সমস্তকিছু লেখার পরেই একবার তাঁর কাছে যেতে হবে হিন্দিতে অনুবাদ করার জন্য।” তবে তাঁর বক্তব্য, “ইংরেজির পাশাপাশি ভারতীয় ভাষাকে তুলে ধরার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু ভারতের তো কোনো একটি রাষ্ট্রীয় ভাষার অস্তিত্ব নেই। তাহলে শুধু হিন্দি ভাষার উপরেই কেন জোর দেওয়া হচ্ছে?” তবে কেন্দ্রীয় সংস্থা কী ভেবে এই নির্দেশ পাঠিয়েছে, সে-বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও তিনি বললেন, “সামগ্রিক ভাষারাজনীতি থেকে একে বিচ্ছিন্ন করে দেখার তো কিছু নেই।”

এতদিন শিক্ষাক্ষেত্রের নানা স্তরে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই বিতর্ক থেকে বাদ গেল না ১৮৭৬ সালে বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার জন্য তৈরি হওয়া এই ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানও। কালটিভেশনের এই নির্দেশকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্নের ঝড় তুলেছেন অনেকেই। এই বিতর্ক কি গবেষণার পরিবেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে না? প্রশ্ন তুলছেন গবেষকরাই।

Powered by Froala Editor

More From Author See More