‘নগ্নতা দৃশ্যে নয়, তোমার মনে’— গোদার্দকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি অ্যানা

১৫ ডিসেম্বর। অন্যান্য দিনের মতই কাটছিল সবার। রবিবারের প্যারিসও ছিল তুমুল ব্যস্ত। হঠাৎই একটা খবর চমকে দিয়ে গেল সিনেপ্রেমীদের। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর অবশেষে হার মানলেন কিংবদন্তি ফরাসি অভিনেত্রী অ্যানা কারিনা। ৭৯ বছর বয়সে শেষ হয়ে গেল একটা বর্ণময় জীবন। চলচ্চিত্র পরিচালকদের ভাষায়, আবারও অনাথ হল ফরাসি সিনেমা। শুধু ফ্রান্স কেন, গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ল সেই আবহ। খবরে বোল্ডে হেডলাইন, “প্রয়াত অ্যানা কারিনা”।

পর্দা হোক বা পর্দার বাইরে, সমস্ত ক্ষেত্রেই অ্যানা কারিনা একজন বর্ণময় চরিত্র। বারবার উঠে এসেছেন আলোচনায়। সেটা তাঁর অভিনয়ের জন্যও যেমন, তেমনই তাঁর সম্পর্কের জন্যও। অবশ্য তাঁর জীবনটাও তো কম রোমাঞ্চের নয়। বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অনেকবার। সারাজীবন ভালবাসার খোঁজে ছুটে গিয়েছেন তিনি। একদম ছোট বয়সেই জড়িয়ে পড়েছিলেন রুপোলী জগতের সঙ্গে। ১৪ বছর বয়সে জীবনে প্রথম বড় পর্দায় এসেছিলেন। সেই সিনেমাই পুরস্কৃত হয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে।

অ্যানার সঙ্গে যিনি আলোচনায় চলে আসবেন, তিনি আরেক কিংবদন্তি। জাঁ-লুক গোদার্দ। ৬০-এর দশকে ফরাসি নতুন ধারার ছবির জগতে যাকে পথিকৃৎ বলে মানা হয়। অ্যানার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, প্রেম, বিয়ে এবং বিচ্ছেদ— সব কিছুই উঠে এসেছে পেজ থ্রি-তে। তবে কোথাও খাটো হয়নি সিনেমার প্রতি তাঁদের ভূমিকায়। ১৯৬১ সালে গোদার্দের ‘আ ওম্যান ইজ আ ওম্যান’ ছবিতে আঞ্জেলা চরিত্রটির জন্য বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান অ্যানা। তারপর একে একে ‘দ্য নান’, ‘ব্যান্দে অঁ-পার্ট’, ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’— বিশ্ব পেয়েছে কালজয়ী সব ছবি। অভিনয়ের পাশাপাশি গান, লেখা, পরিচালনা সমস্ত দিকেই নিজেকে ছড়িয়ে দিতে থাকেন তিনি। ফ্রান্সের নতুন ধারার সিনেমার আইকন হয়ে ওঠেন অ্যানা কারিনা। শুধু অভিনয় নয়, সেই সময় স্টাইল স্টেটমেন্টও নজর কাড়ে সবার। রীতিমত ‘কাল্ট’ হয়ে ওঠেন তিনি।

অন্যদিকে গোদার্দের সঙ্গে অন্য আরেক ঘটনারও উল্লেখ পাওয়া যায়। অ্যানাকে ‘ব্রেথলেস’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন গোদার্দ। অ্যানা তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, ওই সিনেমায় একটা নগ্নদৃশ্য ছিল, যার অভিনয় করতে রাজি হননি তিনি। তখন গোদার্দ অ্যানার একটা বিজ্ঞাপনের শুটিং-এর ছবি দেখিয়ে বলেন, এর আগেও তো নগ্নতাকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন অ্যানা! অ্যানার জবাব – না, আমি স্নানের পোশাক পরেছিলাম। আমি নগ্ন ছিলাম না, নগ্নতা তোমার মনে, তোমার মাথায়।’

পরবর্তীকালে গোদার্দ-অ্যানাকে ‘মোস্ট সেলিব্রেটেড পেয়ারিংস’-এর তকমা দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য সেই সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। চার বছরের মধ্যেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বারবার সেই প্রেমের খোঁজেই ছুটেছেন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। সেটা সিনেমাতেই হোক, বা ব্যক্তিগত জীবনে। সেই যাত্রাই অবশেষে শেষ হল প্যারিসের হাসপাতালের বিছানায়।