মহারাষ্ট্রের বস্তি থেকে পায়ে হেঁটে এভারেস্ট, অনটনকে হারিয়ে নজির তরুণের

তখনও হাইস্কুলের গণ্ডি পেরনো হয়নি তাঁর। পরিবারের আর্থিক অবস্থা সামলানোর ভার এসে পড়েছিল তাঁর কাঁধে। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার জন্যও রীতিমতো চাপ দেওয়া হত তাঁকে। সেইসঙ্গে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, বাসস্থান বদল, গৃহত্যাগ— একের পর এক ঝঞ্ঝা তো ছিলই। শেষ পর্যন্ত সেই সমস্ত প্রতিকূলতাকে হারিয়ে, মহারাষ্ট্র থেকে পায়ে হেঁটে তিনি পৌঁছালেন এভারেস্ট বেসক্যাম্পে (Everest Basecamp)।

সিদ্ধার্থ গনাই (Siddharth Ganai)। মহারাষ্ট্রের ২৩ বছর বয়সী এই তরুণই সম্প্রতি তৈরি করলেন এই অনন্য নজির। যানবাহন বা পরিবহন সংস্থার কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই পৌঁছালেন এভারেস্টের অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে। তবে খুব কিছু সহজ ছিল না তাঁর এই লড়াই। 

দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল সিদ্ধার্থকে। কখনও কাজ করেছেন ছোটো রেস্তোরাঁয়। কখনও আবার দিন-মজুরের কাজ করেছেন মুম্বাই শহরে। ছিল না স্থায়ী ঠিকানাও। বাসস্টপ, রেলস্টেশনই ছিল তাঁর মাথা গোঁজার আশ্রয়। পরবর্তীতে মহারাষ্ট্রের বস্তিতে ছোট্ট একটি ঘরে বন্দোবস্ত করেন সিদ্ধার্থ। খাওয়া-দাওয়ার খরচের পর যেটুকু উপার্জন হাতে থাকত, তা দিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন সিদ্ধার্থ। পাশাপাশি স্বপ্লমূল্যের বিনিময়ে পড়াতেন বস্তির কচিকাচাদের। তবে গোটা ছবিটাই বদলে যায় লকডাউনের সময়। 

একদিকে যেমন উপার্জনের পথ সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল তাঁর কাছে, তেমনই কলেজে অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় হাতে আসে অফুরন্ত সময়। সেটা ছিল গত বছরের জুলাই মাস। ছোট্ট ব্যাকপ্যাক আর তাঁবু নিয়ে অল্প কিছু জামাকাপড় নিয়েই বেরিয়ে পড়েন হিমালয়ের উদ্দেশ্যে। পকেটে টাকা না থাকলেও, ইচ্ছেশক্তির অভাব ছিল না এতটুকু। সেই ইচ্ছেশক্তির জেরেই টানা ৭৫ দিন হাঁটার পর এভারেস্ট পৌঁছান তিনি। খাওয়া-দাওয়া হত পথের ধারের ধাবাতে। তরুণ পদযাত্রীর অনুরোধ ফেরাননি কেউ-ই।  

আশ্চর্যের বিষয়, গোটা যাত্রাপথে থেমে থাকেনি তাঁর কলেজের ক্লাসও। ভোর ৬টা বাজলেই কানে হেডফোন দিয়ে হাঁটা শুরু করতেন সিদ্ধার্থ। ১২ পর্যন্ত ক্লাস চলত এভাবেই। তারপর রাস্তার ধারে তাঁবু বিছিয়ে খানিকক্ষণ বিশ্রাম। কখনও আবার রাস্তার কচিকাচাদের পড়াতে বসে যেতেন সেখানেই। সেইসঙ্গে গোটা পথজুড়ে বৃক্ষরোপণও করেছেন বোটানির শেষ বর্ষের ছাত্র, সিদ্ধার্থ। তাঁর এই অভিযান কোনো উপন্যাস কিংবা গল্পের থেকেও কম রোমাঞ্চকর নয় কোনো অংশেই। 

মাস খানেক আগে মহারাষ্ট্রে ফিরেছেন সিদ্ধার্থ। শুরু হয়েছে কলেজের ক্লাসও। তবে পথের নেশা কি সহজে ছাড়া যায়? আবার অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী মহারাষ্ট্রের যুবক। এবার দক্ষিণের পার্বত্য উপত্যকায় ঘুরে বেড়ানোই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। পকেটে কানাকড়ি না থাকলেও, ইচ্ছেশক্তির জোরে এবারেও অসম্ভবকে জয় করবেন তিনি, তা একপ্রকার নিশ্চিতই…

Powered by Froala Editor