মহামারীর মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াল মার্কিন অর্থনীতি

গত বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকেই যুক্তরাষ্ট্রে হানা দিয়েছিল মারণ করোনাভাইরাস। তবে শুরুতেই লকডাউনের পথে হাঁটেননি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর যার ফলাফল হয়েছিল ভয়ঙ্কর। মহামারীর প্রকোপে ভেঙে পড়েছিল বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। তবে বছর ঘুরতেই মহামারীর সেই ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যা একপ্রকার দৃষ্টান্তই বটে।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে মার্কিন অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.৪ শতাংশ। এমনকি চলতি ত্রৈমাসিকে আরও দ্রুত উন্নত হবে অর্থনীতি এমনটাই আভাষ দিচ্ছে মার্কিন রিপোর্ট। গত বছর মহামারীর শুরু থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষ সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বেকার সহায়তার জন্য। যা সর্বনিম্নে এসে ঠেকেছে চলতি বছরের শুরুতেই। পাশাপাশি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট বলছে যুক্তরাষ্ট্রে বৃদ্ধি পেয়েছে আবাসন বাজার। গ্রাহকদের মধ্যে মাসিক পণ্যক্রয়ে ব্যয় বেড়েছে ২৪ শতাংশ। অন্যান্য পরিষেবার ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি ৫ শতাংশের কাছাকাছি। যা পারতপক্ষে সূচিত করছে সুষম অর্থনৈতিক প্রবাহকেই।

মার্কিন অর্থনীতির এত দ্রুত বৃদ্ধি শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৪ সালে। তারপর এই মহামারীর পরিস্থিতিতে এমন ঘুরে দাঁড়ানো এক কথায় রূপকথার মতোই। বিশেষজ্ঞদের মতে গণ-টিকাকরণ এবং ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাওয়াই ত্বরান্বিত করেছে মার্কিন অর্থনীতির উন্নয়নকে। কারণ, সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখী হওয়ায় খুলে গেছে ডিজনিল্যান্ডের মতো বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, পার্ক, থিয়েটার। সীমিত পরিমাণ পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা থাকলেও, ব্যবসা চলছে রমরমিয়েই।

তবে শুধু সংক্রমণ আয়ত্তে আসাই নয়, এই অর্থনৈতিক রদবদলের পিছনে কৃতিত্ব রয়েছে জো বাইডেনেরও। উন্নয়ন খাতে তাঁর দু’ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত যে যথেষ্ট কার্যকরী হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। পাশাপাশি ধনীদের ওপরেও বাড়ানো হয়েছে কর। জোর দেওয়া হচ্ছে উৎপাদনে। ফলে, মার্চ মাসে প্রায় ৯ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তার আগের দু’মাসে কাজ পেয়েছেন ৪ লক্ষ মানুষ। সবমিলিয়ে রাষ্ট্রপতিত্বের প্রথম তিন মাসেই ১৩ লাখ কর্মসংস্থানের সন্ধান দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন বাইডেন। চলতি ত্রৈমাসিকের আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে কর্মীনিয়োগ, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই মৌলবাদী আক্রমণ? আশঙ্কায় আফগান মহিলারা

তবে এই উন্নয়নের তলাতেও বইছে এক অর্থনৈতিক চোরাস্রোত। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করছে, এই চূড়ান্ত গতিই পরবর্তীকালে মুদ্রাস্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে ঢের দেরি এখনও। মুদ্রাস্ফীতির প্রসঙ্গ বাদ দিলে, করোনার এই কঠিন সময়ে যে কোনো দেশের কাছে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে মার্কিন মডেল এখন এক দৃষ্টান্তই বটে…

আরও পড়ুন
সংবাদ সংস্থা রাষ্ট্রের পাহারাদার নয়, তীব্র প্রতিক্রিয়া মার্কিন জনগণের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মার্কিন সেনেট থেকে সাসপেন্ড ১০ রুশ রাষ্ট্রদূত, নিষিদ্ধ বহু বাণিজ্যিক সংস্থা