এবার বাড়িতেই কোভিড টেস্ট, উঁকি দিচ্ছে তথ্যগোপনের আশঙ্কাও

এবার আর কোভিড টেস্টের জন্য যেতে হবে না হাসপাতালে। বাড়িতে বসে নিজেই কোভিড টেস্ট করতে পারবেন রোগীরা। বাজারে এল পুনের সংস্থা ‘মাইল্যাব’-এর তৈরি র্যা পিড টেস্ট কিট ‘কোভিসেলফ’। আর দামও সাধ্যের মধ্যেই। মাত্র ২৫০ টাকা খরচ করতে হবে এই টেস্ট কিট কেনার জন্য। গতকালই আইসিএমআর সবুজ সংকেত দেয় এই অভিনব কোভিড টেস্ট কিটকে। এমনকি এই টেস্টের পর আরটিপিসিআর টেস্ট করারও দরকার নেই বলে নিদান দিয়েছে আইসিএমআর। 

বর্তমানে আরটিপিসিআর টেস্টের রিপোর্ট আসতে সময় লেগে যায় ন্যূনতম দু’দিন। বেসরকারি সংস্থাগুলিতে কখনও ৩-৪ দিন পরেও রিপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না রোগীরা। সেইসঙ্গে আরও একটি প্রতিবন্ধকতা টেস্টের খরচ। উল্টোদিকে ‘কোভিসেলফ’ রিপোর্ট দেবে মাত্র ১৫ মিনিটে। এই টেস্ট কিট চালু হয়ে যাওয়ার ফলে যে করোনা পরীক্ষার গতি বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু তা সত্ত্বেও রয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু সংশয়। 

বাজারচলতি প্রেগনেন্সি টেস্ট, এইচআইভি কিংবা হেপাটাইটিসের জন্য যে ধরনের টেস্ট কিট ব্যবহার করা হয়, ‘কোভিসেলফ’ তৈরি অনেকটা সেইভাবেই। মূলত এই টেস্ট কিটের মধ্যে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি থাকে। আমাদের দেহের অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে আসলেই অ্যান্টিবডির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে সেগুলি। ফলে, কন্ট্রোলে ফলাফল দেখায় এই টেস্ট কিট। কন্ট্রোলে দুটো দাগ দেখানো মানেই তা সূচিত করবে পজিটিভকে। 

“অ্যান্টিজেন-নির্ভর এমন একাধিক টেস্ট পদ্ধতি এর আগেও বাজারে এসেছে। কিন্তু এই টেস্টের সমস্যা হচ্ছে, এগুলি প্রচণ্ডভাবে ফলস নেগেটিভ দেখায়। মানে এমন হতেই পারে পেশেন্ট সিম্পটোম্যাটিক। কিন্তু তাঁকে নেগেটিভ দেখাল এই টেস্টকিট। স্বাভাবতই ব্যাপারটাকে হালকাভাবেই নেবেন রোগীরা। ফলে, চিকিৎসার অবহেলায় পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে উঠতে পারে পরবর্তী সময়ে”, বলছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডাঃ সৌমিতা পাল। এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে যাতে আরটিপিসিআর টেস্টও করিয়ে নেওয়া হয়, সেই পরামর্শই দিচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?

এখানেই সমস্যার শেষ নয়। রয়েছে এই টেস্ট কিটের ব্যবহারিক জটিলতাও। মাইল্যাবের এই টেস্ট কিট ব্যবহারের জন্য গুগল প্লে স্টোর বা আইওএস থেকে ডাউনলোড করতে হবে একটি বিশেষ অ্যাপ। সেখানে ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য ভরে পরীক্ষার ফলাফলের ছবি পাঠাতে হবে। আর তারপরেই পাওয়া যাবে ডিজিটাল রিপোর্ট। বাড়িতে বসেই টেস্ট করা সম্ভব হলে সবথেকে বেশি উপকৃত হবেন বয়স্করা— এই জায়গাটাতেই জোর দিচ্ছিল আইসিএমআর এবং কেন্দ্র সরকার। তবে সত্যিই কি তাঁরা এই প্রযুক্তির সঙ্গে জুত করে উঠতে পারবেন? এমনকি প্রান্তিক অঞ্চলেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে সাধারণ মানুষকে। 

আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের

পাশাপাশি রিপোর্ট পজিটিভ এলেও, ক’জন মানুষ সেটা প্রকাশ্যে আনবেন— তা নিয়েও থেকে যাচ্ছে সংশয়। অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে রেকর্ড রাখার বন্দোবস্ত করা হলেও আদৌ কি সকলে আগ্রহী হবে টেস্টের রিপোর্ট আইসিএমআরের কাছে জমা দেওয়ায়? ফলে প্রকাশ্যে আসবে না বাস্তব পরিস্থিতির সম্পূর্ণ তথ্য। সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকার ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে গবেষণার ক্ষেত্রেও। সেই কথাই প্রতিফলিত হল ডোমজুড় ব্লকের পাবলিক হেলথ অফিসার স্বাগত সিংহ রায়ের কথায়। তিনি জানালেন, “বাড়িতে বসেই টেস্ট সম্ভব হলে, মানুষ কিন্তু হাসপাতালমুখী কম হবেন। চেষ্টা করবেন বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করতে। তবে পুরোটাই রয়েছে সম্ভাবনার ওপরে। মানে সিভিয়ার ঘটনার ক্ষেত্রে মানুষকে তো হাসপাতালে যেতেই হবে। আর গ্রামে যেখানে ভ্যাকসিন এসে পৌঁছায় না, সেখানে রাতারাতি এই টেস্ট কিট পাওয়া যাবে তেমনটাও বলা যায় না হলফ করে।”

আরও পড়ুন
লোহার ফুসফুস নিয়েই ৬৮ বছর, করোনায় সন্ত্রস্ত আলেকজান্ডার

সব মিলিয়ে একথা স্পষ্ট, আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরির চাপ কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। তবে এই র্যাকপিড টেস্ট কিটের ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে কতটা সচেতন হবেন সাধারণ মানুষ? তথ্য গোপনের প্রবণতা কিংবা অসচেতনতাই বিপদ ডেকে আনবে না তো নতুন করে? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেই জায়গাতেই…

Powered by Froala Editor

More From Author See More