কোভিড-মোকাবিলায় প্লাজমা থেরাপি, নিছক ‘এক্সপিরিমেন্ট’?

করোনা সংক্রমণের চিকিৎসায় এতদিন ধরে প্রায় সমস্ত চিকিৎসকই ব্যবহার করে এসেছেন প্লাজমা থেরাপির পদ্ধতি। অর্থাৎ এর আগে কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের রক্তের প্লাজমা প্রবেশ করানো হয় নতুন রোগীর শরীরে। ফলে পূর্ববর্তী রোগীর শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি নতুন রোগীর শরীরেও কাজ করবে বলেই আশা করেছিলেন চিকিৎসকরা। তবে মঙ্গলবার এই সমগ্র চিকিৎসা পদ্ধতিই বাতিল করল ভারতের চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা। এক বিজ্ঞপ্তিতে আইসিএমআর জানিয়েছে, এবার থেকে কোনো কোভিড রোগীর চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করা যাবে না।

প্লাজমা থেরাপির ফলে কোভিড রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন, এমন প্রত্যক্ষ প্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে ছিল না। নিছক সম্ভাবনার ভিত্তিতে এই পদ্ধতিতে স্বীকৃতি দিয়েছিল আইসিএমআর। তবে সেইসঙ্গে এও জানানো হয়েছিল, এই পদ্ধতি অপরীক্ষিত এবং চিকিৎসক নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজন মনে করলে তা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকে একথা পরিষ্কার, প্লাজমা থেরাপির ফলে কোভিড রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন না, বরং তা বাড়তি বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার ভিত্তিতেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একটি দল এই পদ্ধতি নাকচ করার আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছিল কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই চিঠির ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিএমআর।

১৪ মে ‘দ্য ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ট্রায়াল রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা যায়, প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, জানুয়ারি মাসে খোদ আইসিএমআর-এর প্ল্যাসিড ট্রায়াল রিপোর্টেও স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল, প্লাজমা থেরাপির সঙ্গে কোভিড রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার কোনো সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকের কথাও তুলে ধরেছেন। দেখা গিয়েছে, অন্য কারোর অ্যান্টিবডি প্রবেশ করলে নিজের শরীরের স্বাভাবিক অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে এক্ষেত্রে চিকিৎসায় বিপরীত ফল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, আইসিএমআর নিজস্ব ট্রায়ালের রিপোর্টের পরেও এই পদ্ধতি বন্ধ করতে এতদিন সময় নিল কেন?

ইতিমধ্যে দেশের নানা প্রান্তে সাধারণ মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন কোভিড চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি প্লাজমা থেরাপি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেশ কিছু বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল আপদকালীন প্লাজমা ব্যাঙ্ক। তবে কোভিড-অ্যান্টিবডিযুক্ত প্লাজমা আর কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে কিনা, তাও পরিষ্কার নয়। তাছাড়া, এতদিন ধরে এই পদ্ধতির ফলে যদি সত্যিই রোগীদের শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে, তাহলে তা রীতিমতো চিন্তার বিষয়। অন্তত জানুয়ারি মাসের পর থেকে এই অব্যবস্থার জন্য আইসিএমআর-কেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের