উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট, কাজাখস্তানের সমুদ্রে জন্ম বিস্ময়কর ‘আইস ভলক্যানো’র

কয়েকদিন আগের কথা। তখনও পর্যন্ত অখ্যাতই ছিল কাজাখস্তানের আলম্যাটি। তবে গত পরশু থেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কেন না সেখানে সমুদ্রের মধ্যে থেকে মাথা চারা দিয়ে উঠেছে বরফের আগ্নেয়গিরি বা ‘আইস ভলক্যানো’। তবে ‘আগ্নেয়গিরি’ বলা হয়তো ঠিক হবে না। কারণ আগুন সেখানে নেই। নেই লাভাস্রোতও। বরং এই ‘আগ্নেয়গিরি’ থেকে বেরিয়ে আসছে দ্রুতগতির জল এবং তার সঙ্গে তুষার।

কিন্তু কী এই ‘আইস ভলক্যানো’? মূলত তুষারাবৃত অঞ্চলে দ্রুত বায়ুপ্রবাহের জন্যই মাঝে মাঝে ফাটল ধরে বরফের চাদরে। আর তার সঙ্গে যদি দোসর হয় সমুদ্রস্রোত, দ্রুত গতিতে বরফের তলার জল ছিটকে বেরিয়ে আসে বাইরে। তবে বাইরে বেরিয়ে এলেও খুব বেশিক্ষণ তরল অবস্থায় থাকে না সেই জল। হিমশীতল পরিবেশের কারণে তা ভূমিস্পর্শের আগেই পরিণত হয়ে যায় তুষারে। এভাবেই তৈরি হয় কয়েক মিটার পর্যন্ত উচ্চতার বরফের আগ্নেয়গিরি। এমনকি ২০১৬ সালে গবেষকরা বামনগ্রহ প্লুটোতে একটি একই ধরণের আইস ভলক্যানো সনাক্ত করেন, যার উচ্চতা প্রায় ২.১৫ মাইল, বিস্তৃত ৯০ মাইল অঞ্চল জুড়ে। তবে হাওয়ার গতিবেগের সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ মোটামুটি ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত না হলে, সচরাচর দেখা যায় না এমন বিরল প্রাকৃতিক ঘটনা।

কাজাখস্তানে জন্ম নেওয়া এই আগ্নেয়গিরির উচ্চতা বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ ফুট। আর আকর্ষণীয় এই দৃশ্য উপভোগ করতেই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই ভিড় জমাচ্ছেন কয়েক শো মানুষ। তবে আগুন নেই বলে যে নিরাপদ এই আগ্নেয়গিরি, তেমনটা একেবারেই নয়। সমুদ্রের উপরের পৃষ্ঠের বরফের চাদর ভঙ্গুর হওয়ার কারণে যে কোনো সময়ই ঘটে যেতে পারে কোনো দুর্ঘটনা। পাশাপাশি বায়ুপ্রবাহ জোরালো হলে ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক ঝড়েরও রূপ নিতে পারে পরিস্থিতি।

কাজাখস্তানের রাজধানী থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে এই আগ্নেয়গিরিতে। বাল্টিক সাগরের নিকটবর্তী কেগান আর শ্রাগানাক গ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চলেই বর্তমানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সমুদ্রদানব। গত বছরই যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে একই রকমের দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। এবার কাজাখস্তানে মিলল সেই সুযোগ। তবে শুধু মানুষই নয়, আইস ভলক্যানোতে রীতিমতো ‘ভিড়’ দেখা যায় ‘স্নোয়ি আউল’ বা তুষার পেঁচারও। কারণ বরফের স্রোতের সঙ্গে ছিটকে বেরিয়ে আসা সামুদ্রিক মাছ শিকারে হাজির হয়েছে তারাও। সব মিলিয়ে কাজাখের এই শীতল আগ্নেয়গিরিই এখন হয়ে উঠেছে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু…

Powered by Froala Editor