মাত্র কয়েকদিন আগেও নদী বলে চেনা যেত না। জলে ভেসে বেড়াত নোংরা, আবর্জনা; জায়গায় জায়গায় তৈরি হত কচুরিপানা। জঞ্জাল ফেলার খালের থেকে রূপে আলাদা ছিল না এটি। কিন্তু ভারতের অন্যতম পরিচিত নদী ছিল এটি। আজ অবশ্য ইন্দোরে সরস্বতী নদীর পাশে দাঁড়ালে সেসব কিছুই মনে হবে না। ঝাঁ চকচকে রূপ, টলটল পরিষ্কার জল— যেন নবজন্ম হয়েছে। আর এই যাবতীয় কাজ সম্ভব করেছেন যিনি, সেই আইপিএস অফিসার আশিস সিংকেও তো একটা বাহবা দিতেই হয়!
ইতিহাসের প্রাচীন সময় থেকে যে কটা নদী আমাদের সামনে প্রবলভাবে উঠে এসেছে, তার মধ্যে সরস্বতী অন্যতম। নানা সময় নানা কাহিনিতে, লোককথায় উঠে এসেছে এই নদীটি। কিন্তু সে তো সব তো পুরনো। নদীমাতৃক দেশ ভারতে রীতিমতো পুজো করা হয় যে নদীকে, তারই অবস্থা ক্রমশ তলানির দিকে। সে গঙ্গাই হোক, বা অন্যান্য ছোটো ছোটো নদী। এই ‘দূষণ’-এর হাত থেকে রেহাই পায়নি সরস্বতী নদীও। ইন্দোর শহরের ওপর দিয়েও কিছুটা প্রবাহিত হয়েছে এই নদী। সেখানেই চূড়ান্ত অবহেলার মধ্যে পড়েছিল সরস্বতী।
নদীর আক্ষরিক অর্থে কোনো চিহ্নই ছিল না। শুধু ছিল প্রচুর পরিমাণ আবর্জনা। যাবতীয় নিকাশি নালা থেকে বর্জ্য এসে পড়ত এই নদীতে। আশেপাশের বাড়ি থেকেও আবর্জনা ফেলা হত এখানে। যে নিকাশি পাইপলাইনগুলো আগে থাকতেই ছিল, সেগুলোর নানা জায়গা জমে গিয়েছিল। কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল; যার ফলে সরস্বতীর এই দুরবস্থা। একটা ভরা নদী, আস্তে আস্তে নোংরা খাল হওয়ার দিকেই এগোচ্ছিল। যদি না ইন্দোর মিউনিসিপালের কমিশনার ও আইএএস অফিসার আশিস সিং নিজে উদ্যোগ না নিয়ে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসতেন।
প্রথমেই শহরের সমস্ত নিকাশি নালাগুলিকে পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সবসময় এই পুরো ব্যবস্থা যাতে ঠিকঠাক কাজ করে, সেই দিকেই আসল লক্ষ্য রেখেছিলেন তিনি। কোনোভাবে যেন নতুন করে দূষণ তৈরি না হয়। এরপরের কাজটি ছিল সরস্বতী নদী পরিষ্কার করা। আশিস সিং এবং তাঁর টিম একসঙ্গে মিলে এই কাজটি সম্পন্ন করেন। আর আজ? ইন্দোরের দুই কিলোমিটার জুড়ে থাকা সরস্বতী নদীর রূপই বদলে গেছে একদম। আগের অসুস্থ চেহারাটা আর নেই, যা চকচকে রূপটাও ফিরে এসেছে। জঞ্জালের চিহ্ন তো নেইই; আর সেসব না থাকায় জলের অক্সিজেনের পরিমাণও বেড়েছে। লকডাউনের পরিস্থিতি যখন চলছে দেশ জুড়ে, তখনই সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে এই কাজ। আর এই পুরোটা সম্ভব হয়েছে আশিস সিংয়ের জন্যই। এইভাবে আমরা সবাই যদি এগিয়ে আসি, উদ্যোগ নিই, তাহলে চারিপাশটা কীরকম সুন্দর হয়ে যাবে ভাবুন তো!