রামমোহন চিঠি লিখলেন বড়লাটকে, সংস্কৃত কলেজে ঠাঁই হল হিন্দু কলেজের

উনবিংশ শতকের প্রথম দিক। সেই সময়, বা তারও আগে বাংলায় সেরকম উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তবে আস্তে আস্তে নবজাগরণের মুখ দেখে বাংলা। উনবিংশ শতকের শুরুর সময় থেকেই হিন্দু ঘরের সন্তানদের ইংরেজি, ভারতীয় ভাষা, বিজ্ঞান-সাহিত্য শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়। সেইসঙ্গে ধর্মীয় কুসংস্কার যাতে দানা না বাঁধতে পারে, সেই ভাবনাও চলতে থাকে। এই সমস্ত কিছুর ফসল হিসেবে ১৮১৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি নতুন কলেজের। হিন্দু কলেজ। কালে কালে যে নাম বদলে প্রেসিডেন্সি কলেজ, এবং বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্য থেকে আজও সরেনি বাংলা তথা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়।

নয় নয় করে ২০০ বছর পেরিয়ে গেছে কলেজ স্ট্রিটের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হিন্দু কলেজের ইতিহাস থেমে আছে শুরুর ৩৭ বছরেই। শুরুর দিকে জুনিয়র ও সিনিয়র দুটি বিভাগ থাকলেও, ১৮৫৪ সালে আলাদা হয়ে যায়। জুনিয়র বিভাগ হয়ে যায় হিন্দু স্কুল, এবং সিনিয়র বিভাগ প্রেসিডেন্সি কলেজ। শুধু এখানকার পড়ুয়ারাই নন, এখানকার শিক্ষকরাও বাংলা এবং ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। ভারত (রাজেন্দ্র প্রসাদ), পাকিস্তান (মহম্মদ আলি বোগরা), বাংলাদেশ (আবু সইদ চৌধুরী) — তিন দেশেরই প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান এখানকার ছাত্র ছিলেন।

তবে আজ যে বিশাল ক্যাম্পাসটি আমরা যাতায়াতের পথে দেখি, একসময় কিন্তু তেমনটা ছিল না। বারবার জায়গা বদল হয়েছে এই কলেজের। চিৎপুর, বউবাজার-সহ কলকাতার নানা জায়গায় ভাড়া বাড়িতে চলেছে পড়াশোনা। এদিকে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তখন কলেজের পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য রাজা রামমোহন রায়ের বড়লাট লর্ড আমহার্স্টকে লেখা একটি চিঠি পরিস্থিতির একটা সুরাহা ঘটায়। এখনকার সংস্কৃত কলেজের সঙ্গে একই বাড়িতে ঠাঁই পায় হিন্দু কলেজ। অবশ্য একসময়ের দেশীয় হিন্দু পরিচালন সমিতি ভেঙে যায় ১৮৫৪ সালে। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে আসে এই কলেজ। হিন্দু কলেজ বদলে যায় প্রেসিডেন্সি কলেজে। নাম বদল হলেও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রেসিডেন্সি কী, সেটা আর নতুন করে বলার দরকার নেই।