৭. প্রথম বাংলা সাংবাদিকতা ১৬৬৫-তেই?

১৯৭৮ বা ২০০০ সালের বন্যা এতদিনে কিংবদন্তি। এছাড়াও বিগত দেড় দশকে তিনটি প্রলয়ংকর ঝড়—আয়লা, আমফান ও ইয়াস-এর সাক্ষী আমরা। দেখেছি ঝড় ও জলের তোড়ে হাজার-হাজার মানুষের গৃহহীন দশা। সেইসঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকদের কাজকর্মও কি দেখিনি? কখনো কোমর-জল ভেঙে, কখনো আবার প্রবল ঝড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে কর্তব্য পালন করেছেন তাঁরা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিনকালে, তাঁদের ভূমিকাও ভুলে যাওয়ার নয়।

প্রায় প্রতিবছরই বাংলার কোথাও-না-কোথাও বন্যা লেগেই থাকে। আমরা যারা কলকাতা বা তৎসংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দা, দামোদরের বন্যায় প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হই না বিশেষ। অথচ একটি নদ, যার নামই হয়ে গেল ‘বাংলার দুঃখ’—কয়েক বছর অন্তর ভাসিয়েই চলেছে রাঢ়বঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভিটেহারা মানুষের কান্না, মৃত্যু ভেসে ওঠে সংবাদপত্রে, টেলিভিশনের স্ক্রিনে। যে-সময় সংবাদপত্র ছিল না, সাংবাদিকতার ন্যূনতম ধারণাটুকুও জন্মায়নি বাংলার কারোর(বিলেতেও কি?), তখন কেমন ছিল দামোদরের আস্ফালন? ইতিহাস সেসব মনে রাখেনি। সরকারি নথিতেও, দামোদরের বন্যার প্রথম রেকর্ড পাওয়া যায় অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধেই। তবে, তারও প্রায় ১০০ বছর আগে, এক অজ্ঞাত বাঙালি কবি লিখে রেখেছিলেন একটি কবিতা। সে-কবিতার বিষয় ছিল দামোদরের বান ও তার ফলে ক্ষতির খতিয়ান। সময়? ‘সন হাজার বাহাত্ত সালে প্রথম আস্বিন্যে’, অর্থাৎ ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস।

১৬৬৫। বাংলাভাষায় তখন ধর্মাশ্রয়ী কাব্য ছাড়া অন্য-কিছু কল্পনা করাই মুশকিল। লৌকিক ঘটনার বিবরণ যে কোথাও নেই তা নয়, তবে সেসবও আবর্তিত হয় ধর্মকে কেন্দ্র করেই। তেমন এক সময়ে, দামোদরের বন্যা নিয়ে কাব্যরচনা—ব্যতিক্রমী উদাহরণ এক। ‘অনালোচিত’ এই কবিতাটি কি বন্যার অনতিপরেই লেখা? নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। হতেই পারে, কবি বেশ কয়েক দশক পরে, নবীন প্রজন্মকে সে-বন্যার কাহিনি জানাতে এ-কাব্য লিখছেন। আবার এ-ও অসম্ভব নয় যে, বন্যার পর-পরই লেখা এই ‘বানের কবিতা’। প্রথম দু-পঙক্তি থেকেই স্পষ্ট, নিছক শখে লেখা হয়নি এটি; পাঁচালির ভঙ্গিতে পাঠ করে অন্যদের জানানোর উদ্দেশ্যই ছিল মুখ্য— ‘অবধান কর ভাই ষুন সৰ্ব্বজন / মন দিআ ষুন সভে কবিত্রি রচন।’ 

এবার ফিরি শিরোনামের একটি শব্দে। কেন এ-কবিতাকে ‘সাংবাদিকতা’ ভাবছি আমি? বাংলাভাষায় প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৮১৮ সালে— সমাচার দর্পণ(‘বেঙ্গল গেজেটি’ কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে)। তারও প্রায় দেড়শো বছর আগে, আমাদের আলোচ্য কবিতটিতে কবি যে-দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তাকে এক অর্থে সাংবাদিকতাই বলা চলে। উদ্দেশ্যও ছিল প্রায় একই—বন্যার ফলাফল সম্পর্কে অন্যদের জানানো। ফারাক বলতে, যুগধর্ম অনুযায়ী, গদ্যে না-লিখে পদ্যাকারে ঘটনা-বিবরণ লেখা। কবির অবচেতনে সাংবাদিকতার কোনো চিন্তা বা ধারণা যে ছিল না, বলাই বাহুল্য। তবে পাকেচক্রে লেখাটি ‘সংবাদ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে—এ-কথা বললে অত্যুক্তি হয় না। এদিকে, সাংবাদিকতার ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত সংবাদপত্র মাধ্যমটি। আলোচ্য কবির কবিতাটি(কবিতা না বলে ঘটনা-বিবরণী বলাই শ্রেয়) কোনো সংবাদপত্রে বেরোয়নি; বরং ‘সংবাদপুথি’ বলা যেতে পারে।

আরও পড়ুন
৬. ‘এই পুস্তক যে চুরি করিয়া লইবেন...’

কোন-কোন সংবাদ জানা যাচ্ছে কবিতাটি থেকে? তারিখের কথা আগেই বলেছি— ১০৭২ বঙ্গাব্দের পয়লা আশ্বিন। দামোদরে বান এসেছে সেদিন। পাহাড়(দামোদরের উৎস ছোটোনাগপুর মালভূমি) থেকে সশব্দে নেমে আসছে জল। সেই জল সমতলে অর্থাৎ রাঢ়বঙ্গে পৌঁছে ‘জোজন যুড়িআ বান হৈল পরিসর’। জলের তোড়ে উপড়ে যাচ্ছে গাছ-পাথর। নির্দিষ্ট খাত ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নদী, ডুবে যাচ্ছে পুকুর। পর্বত-সমান ঢেউ চারপাশে। ইঁদুর থেকে শুরু করে শেয়াল, কুকুর, বেড়াল, সজারু, হরিণ, কুমির, বাঘ, মোষ, গণ্ডার, ভালুক, বানর সব ভাসছে জলে। ত্রাহি-ত্রাহি রব চারদিকে। বিপাকে মানুষও। ঘুমন্ত অবস্থাতেই কাউকে ভাসিয়ে নিচ্ছে বান, কারোর আবার মৃত্যু আসছে জলে ডুবেই। মৃত্যুকালে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ‘রাম-নারায়ণ’ ডাক ছাড়ছেন। দেওয়াল ভেঙে ঘরে ঢুকছে জল। উঠোন ডুবতে দেখে বাড়ির মেয়েরা আশ্রয় নিচ্ছে বাড়ির চালে। এইভাবে বান এগোতে এগোতে গিয়ে পৌঁছোল বর্ধমানে। মোগল, পাঠান, কাজি— তৎকালীন সমাজের শাসকরাও বিপর্যস্ত বন্যায়— ‘মোগল পাটান ভাশি বড় বড় কাজি / জলেতে ভাসিল আরহন কর্যা  তাজি।’ ফকিরের মুখে পিরের নাম। বৈষ্ণব ভাসমান অবস্থাতেই আঁকড়ে ধরেছেন জপমালা। ভাগবত পুরাণ ভেসে যেতে দেখে ব্রাহ্মণ ভাবছেন, ঈশ্বর রুষ্ট হলেন বুঝি-বা। বর্ধমান নগরীতে বিভিন্ন পেশার লোকেদেরও কপাল পুড়ল একইসঙ্গে। তামাকপাতার কারবারি, তাঁতি, গোয়ালা, বণিক, চাষি, গন্ধবেনে, মোদক, ছুতোর, ব্যাপারী, কলু, মালি, দৈবজ্ঞ, কুমোর, ধোপা, শাঁখারি, কামার, জোলা, সাপুড়ে, মুচি, জেলে সহ আরও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত দামোদরের বানে। 

আরও পড়ুন
৫. রামপ্রসাদের বর্ণমালা-চর্চা

কবিতাটি পড়লে, আরও সহজে বোঝা যাবে পরিস্থিতি—

আরও পড়ুন
৪. দুই যুবকের প্রেম-দোল

‘অবধান কর ভাই ষুন সৰ্ব্বজন
মন দিআ ষুন সভে কবিত্রি রচন।
সন হাজার বাহাত্ত সালে প্রথম আস্বিন্যে
দামুদরে আইল বান ষুন সৰ্ব্বজনে।
আড়া চার জল হৈল পৰ্ব্বত উপরে
মুনিস্য ডুবাতে মন কৈল দামুদরে।
পৰ্ব্বত হইতে জল পড়ে মহাতেজে
হুড় হুড় দুড় দুড় করে জলের বাদ্র বাজে।
জোজন ষুড়িআ বান হৈল পরিসর।
উফাড়িআ ফেলে কত গাচ জে প্রাথর।
প্রথমে ভাসিল কুটি নদি যুড়ে ফেনা
পুখুর হইল হারা বেগে বঅ হানা।
তিন আদি কাষ্ট সব হৈল একালব
পৰ্ব্বত সমান হএ বহে ঢেউ সব।
ভাসিল মআল সৰ্প পৰ্ব্বতিআ বড়া
আনন্দে চলিল বেঙ্গ তাহে চাপ্যা ঘড়া।
চাপিলা ভুজঙ্গ পিষ্টে মনে মনে হাশে
ভেটিব ষুমুদ্র আজি মনের হরিসে।
অজগর বলে ভাই কর অবধান
কোনকালে নাই হঅ এত অপমান।
এককালে কৃষ্ণকে গিলিআছিল কালি
শেই অপরাধে বেঙ্গের ঘড়া হলি।
পক্ষ আদি ভাশে কত ইকুড়া ইন্দুর
নেউল কটাস ভাশে সিগাল কুকুর।
সসারূ হরিন বরা কুম্ভির আপার
সাদুল মহিস গণ্ডা যুড়িল সাতার।
ভর্লুক ভাসিল জলে বিধির বিপাকে
পড়িআ বানরগন পরিতাই ডাকে।
জলের কলর কিছু ষুনিতে না পাই
হাকা হরি কর্যা তারা ডাকে বাপ ভাই।
নিশিজোগে ভাসে গেল কত সত কালা
এখুনি দেখিব ভাই মুনি সগর খেলা।
কেহ ষুআ নিদ্রা জাঅ দুই ত সতিনে
ধরাধরি করা ভাসে ত্রিন জনে।
দৈবের নিবন্ধ হেতু পুত্র নাই কল্যা
চল গিআ মরি গঙ্গাসাগরের জলে।
জলের কলর কিছু ষুনিতে না পাই
হাকাহাকি কর্যার তারা ডাকে বাপ ভাই।
নিসি জোগে ভেসে গেল কত সত কলা
এখুনি দেখিব ভাই মুনি সগর খেলা।
ডুবিআ মরিল জলে কত কত ছেল্যা
বুড়া বুড়ি মৈল তারা রাম নারাঅন বল্যা।
কেহ ষুআ নিদ্রা জাঅ খট্টার উপরে
দিআল ভাঙ্গিআ জল প্রবেসিআ ঘরে।
বারি হআ দেখে জল উঠানে সাতার
চালে উঠে বলে দেখি রক্ষ এইবার।
নারিকে কহিল তবে না ছাড়িহ মোরে
সাহস করিআ উঠে চালের উপরে।
চালের উপরে কত কুলের কামিনি
তা সভার শোকে পতি তেজিল পরানি।
তবে ত প্রলঅ বান করিআ পআন
দেখিতে দেখিতে গিআ পালা বদ্ধমান।
মোগল পাটান ভাশি বড় বড় কাজি
জলেতে ভাসিল আরহন করা তাজি।
নেপ তুলা ভাসে গেল কাগচের গড়া
রাউত সহিত কত ভাগে উঠে ঘড়া।
পরানে কাতর বির নাঞি হঅ স্থির
ফকির ভাসিল জলে স্মঙরিআ পির।
কত কত ভেশে গেল শেক সেএ ভেআ
বৈষ্টব ভাসিল জলে মালা তিলক নআ।
ব্রাহ্মন বলেন বাম হৈল ভগবান।
খুঙ্গি পুতি ভাশে গেল ভাগবত পুরান।
আছিল বিরাল জত আন্ধারিআ কোনে
উবুডুবু বা কর্যা তারা মরিল পরানে।
দোক্তরির তক্তি ভাশে কাপাসের মাল
ছাগল গাড়র কত ভাসে পালে পাল।
তামুলির গুআ পান বন্নিকের কড়ি
গুআলার ভাসে গেল দুগ্ধলি দড়ি।
গুআলা সহিত কত ভাসে গেল পাল
হেমজল খাএ তারা মরিল রাখাল।
হাজিল চাপির ধান্য ভাসিল লাঙ্গল
গোন্ধবেনের ভেসে গেল নলঙ্গ জাঅফল।
মদকের নুড় গেল তাতির বসন
ছুতারের চিড়ে মুড়ি বেপারির নুন।
কলুর ভাসিল তৈল মালির বাগান
দম্ফ ভাসে গেল রে ফুকুরে কান্দে কান।
পটিদারের পটি কত ছিল তানা ছন্দে
সকল পটি ভেস্যা গেল মাথা হাথ কান্দে।
ভাটের কাটারি গেল দৈবগের পাজি
মিআ সভার ভাবে গেল পুরাতন কাজি।
কুমারের চাক গেল রজকের পাটা
ডমের চুপড়ি গেল হাড়ির গেল ঝাঁটা।
শাখারির শঙ্খ গেল নাপ্তির আলতা
শনারের শনা রূপ কামারের জাতা।
গাএন গুনিন ভাশে হাথে করি জন্তু
শাপুড়ের শাপ গেল ভুলে গেল মস্ত।
কাটুনির চরখা গেল জোলাদের যুতা
আক্ষটির লল গেল মুচির গেল জুতা।
জেলেদের জাল গেল বাগদির লাঠি
বারূঅের বারূই গেল ষুড়ির গেল ভাটি।...’
(অসম্পূর্ণ)

আরও পড়ুন
৩. ভারতচন্দ্রের গা-জোয়ারি অথবা এক্সপিরিমেন্ট

পুথিটি খণ্ডিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল, ফলে, এর পরের বর্ণনা হস্তগত হয়নি। তবে যেটুকু বর্ণনা রয়েছে, তা-ও ফেলনা নয়। বন্যা ও তার ফলাফলের সুষ্পষ্ট ছবি—‘লাইভ দৃশ্যায়ন’—ফুটে ওঠে এ-কবিতার মধ্যে দিয়ে। যেন কোনো রিপোর্টার অকুস্থলে হাজির হয়ে ঘটনাক্রমের বর্ণনা দিয়ে চলেছেন। তবে এর মধ্যেও সামান্য বিচ্যুতি রয়েছে বইকি! যেমন—‘ভাসিল মআল সৰ্প পৰ্ব্বতিআ বড়া / আনন্দে চলিল বেঙ্গ তাহে চাপ্যা ঘড়া।’ কিংবা ‘অজগর বলে ভাই কর অবধান / কোনকালে নাই হঅ এত অপমান। / এককালে কৃষ্ণকে গিলিআছিল কালি / শেই অপরাধে বেঙ্গের ঘড়া হলি।’—এই পঙক্তিগুলিতে ময়াল ও অজগর সাপের মুখে কথা বসিয়ে সংবাদ-বর্ণনা থেকে খানিক সরে গেছেন কবি। তারপরও, সামগ্রিক লেখাটির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না কিছুতেই।

আরও পড়ুন
২. রামানন্দের গাঁজার গান

শুধুমাত্র এই কবিতাটিই নয়, বাংলা পুথি-সম্ভারে উঁকি দিলে, বন্যাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য দু-একটি কবিতাও খুঁজে পাওয়া যায়। ১২৩০ বঙ্গাব্দের বর্ষা অর্থাৎ ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে দামোদরের বন্যা সম্পর্কে লেখা হয়েছিল—

আরও পড়ুন
১. সৈয়দ মর্তুজার কৃষ্ণপ্রেম

‘নদী সে দামোদরে, বড়া করে, করহে আনা গোনা।
দুধারে মিশায়ে ভাজে সেরগড় পরগণা।।
এলো বান পঞ্চকোটে, নিলেক লুটে, ভাঙ্গলো রাজার গড়।
দুড়্‌ দুড়্‌ শবদে ভাঙ্গে পর্ব্বত পাথর।।’ ইত্যাদি

জানা যাচ্ছে, পুরুলিয়ার পঞ্চকোটে রাজার গড় ভেঙেছে বানের তোড়ে। বর্ধমানের সেরগড় পরগনাও আক্রান্ত। এমনকী, একই বন্যা নিয়ে লেখা আরেক কবিতায় দেখি ‘মল্লদেশ’ অর্থাৎ বাঁকুড়াও বিপর্যস্ত। অর্থাৎ, রাঢ়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিপাকে পড়েছিল সেবারের বন্যায়—

‘কি মতে বন্যা হল সে সকলে করহ শ্রবন
৮ আস্বিনে দেবতা মেঘের গর্জ্জন।
ন দিনের বুধবারে রাত দুপ্রহরে মুসলধারে জল
অনাছিষ্টী হয়ে বিষ্টী ভাসাল সকল।
সন ১২৩০ সালে ডুবল জলে দসই আস্বিনে
পেয়ে বৃহস্পতিসেস ভাসল দেস নদিজল কলবলি
অমনি সিগরভূঞী ভাসে ষোল সুমুদ্র ভেসে ভাস্য এল মল্লদেসে।
ডুবল কালকাটা বিসম লেঠা পাট পুর জায় ভেসে
সাহেব সুবা বন্না দেখে রাত্র দিবা বসি।’ ইত্যাদি

১৮২৩-এর বন্যার করাল থাবা বিভিন্ন কবিকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল ঘটনাক্রম। দ্বিতীয় কবিতাটি থেকে জানা যায় প্রেক্ষাপট—৮ আশ্বিনের মেঘগর্জন থেকে শুরু করে ১০ আশ্বিন মুষলধারে বৃষ্টির ফলে বন্যা। মল্লদেশ তো বটেই, ‘কালকাটা’(কলকাতা কি?)-ও রেহাই পায়নি বন্যার কবল থেকে। সাহেবসুবোরা অসহায়, দিনরাত গৃহবন্দি হয়ে বন্যা দেখছেন। অন্যদিকে, ১৮৩৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ অর্থাৎ ১৮৩১ সালে দ্বিজ দ্বারকানাথ নামের আরেক কবির ‘বানের কবিতা’-তেও রয়েছে সে-বছরের বন্যার বিস্তৃত বিবরণ। বাদ পড়েনি মানুষের অসহায়তার কথাও— ‘রাজকর কিসে দিব কি খাইব অন্তরে ভাবিয়া / স্থানান্তরে কেহ গেল দুখিত হইয়া।’

এভাবেই, বিভিন্ন সময় বাংলার বন্যা ও তৎ-সংক্রান্ত পরিস্থিতি নিয়ে লেখা হয়েছে একাধিক কবিতা। এ-সব কবিতায় ভক্তির বালাই নেই, রয়েছে ঘটনাক্রমের বিবরণী। ১৮২৩-এও সংবাদপত্রের ভিত শক্ত হয়নি বাংলায়; অথচ সে-বছরের কবিতাতেও সংবাদধর্মিতা চোখ এড়ায় না আমাদের। তবে সবচেয়ে বিস্ময় জাগায় ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দের অজ্ঞাত কবির কবিতাটি। এবং সেই সূত্র ধরেই, শিরোনামের প্রশ্নে ফিরে যেতে হয় আবার— ‘বাংলার প্রথম সাংবাদিকতা’ বলে কি চিহ্নিত করা যায় সেটিকে? পাঠকের হাতেই রইল বিচারের ভার...

Powered by Froala Editor