স্কটল্যান্ডজুড়ে সোনা খোঁজার হিড়িক, দলে দলে মানুষ ছুটছেন পাহাড়ি উপত্যকায়

সূর্য পাটে বসতে চলেছে। ক্লান্ত অভিযাত্রীর দল নদীর ধারে বসে পড়েছেন। কিন্তু না, এভাবে থেমে গেলে চলবে না। আর একটু এগিয়ে যেতে পারলেই সোনার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ওই তো, সবুজ পাথরের গায়ে রোদ পড়ে চকচক করে উঠছে, কী ওটা?

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্কটল্যান্ডে (Scotland) পাড়ি জমাতে শুরু করেছিলেন অভিযাত্রীরা। সেই সোনার খোঁজ (Gold Rush) যেন নতুন করে ফিরে এসেছে কোভিড পরিস্থিতিতে। তবে ধনী হওয়ার নেশায় নয়। এখন মানুষ ছুটছেন অল্প কিছু সোনার আশায়। কেউ হয়তো প্রেমিকার জন্য একটা সোনার আঙটি গড়াবেন। কারোর চাহিদা আবার একটু বেশি। তাঁর হাতঘড়ির জন্য চাই একটা সোনার বেল্ট। অন্য সময় হলে হয়তো বাজার থেকেই কিনে নিতেন। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে অনেকেরই হাতে তেমন কাজ নেই। এই সময়টায় একটা অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়াই যায়। তবে শুধু এটুকুই কারণ নয়। এর মধ্যে স্কটল্যান্ড সরকার জানিয়েছে, আগামী নভেম্বরেই দেশের প্রথম সোনার খনির কাজ শুরু হতে চলেছে। আর তাহলে এভাবে ব্যক্তিগতভাবে সোনা অনুসন্ধান করা আর সম্ভব হবে না। ফলে এই সময়টা নষ্ট করতে রাজি নন কেউই।

গ্লাসগো শহরের দক্ষিণে পাহাড়ি উপত্যকায় এমনিতেই পড়ে আছে অসংখ্য তাঁবু। সময়ে সময়ে কম অভিযাত্রী তো আসেননি এখানে। তাঁদের বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও পড়ে আছে এদিক সেদিক। তবে সেইসব পুরনো যন্ত্রের উপর ভরসা করতে হয় না। কারণ বেশ কিছু মানুষের কাজই হল অনুসন্ধানীদের যন্ত্রপাতি ভাড়া দেওয়া। সেইসঙ্গে কীভাবে পাথর থেকে সোনা নিষ্কাষন করতে হবে, তাও তাঁরা হাতেকলমে শিখিয়ে দিয়ে থাকেন। তাঁরা নিজেরাও মাঝে মাঝে নেমে পড়েন সোনা অনুসন্ধানের কাজে। তবে গত কয়েক মাসে সেই সময়টাই পাচ্ছেন না কেউ। ৭০-এর দশক থেকেই ওয়ানলকহেড উপত্যকায় সোনার অনুসন্ধানে আসতে শুরু করেছেন মানুষ। কিন্তু এই ৫০ বছরে কোনোদিন এত মানুষের ভিড় হয়নি। তাই ভিড় সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় মানুষজন।

সেই ১৮৬৮-৬৯ সালে একের পর এক অভিযাত্রী আসতে শুরু করেছিল স্কটল্যান্ডে। সোনা অনুসন্ধানী ব্যবসায়ীরা পরে সেই ঘটনার নাম দিয়েছিলেন ‘সাদারল্যান্ড রাশ’। তবে ১৮৭০ সালেই ব্রিটিশ রাজপরিবারের নির্দেশে বিদেশীদের আনাগোনা বন্ধ করা হয়। সাদারল্যান্ড রাশের সেই শেষ। কিন্তু মানুষের মন থেকে সোনার নেশা কি সহজে যায়? ক্রমশ স্কটল্যান্ডের বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিরও মনে হয়, যদি সত্যিই সোনার খনি থেকে থাকে তবে অনুসন্ধান করে দেখা দরকার। সেই কাজও শুরু হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়ানলকহেড অঞ্চলে খুব বেশি সোনা নেই। ট্যান্ড্রাম ভিলেজ পেরিয়ে গেলে তবেই প্রকৃত সোনার খনির সন্ধান পাওয়া সম্ভব। সেখানেই খননকার্য শুরু হতে চলেছে আগামী নভেম্বরে।

আরও পড়ুন
কলকাতার বুকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের কোর্স, পারিশ্রমিক ১০টি সোনার মোহর!

দীর্ঘদিন পরিবেশকর্মীদের আপত্তির কারণে সোনা খননের কাজ শুরু করা যায়নি। কারণ বাণিজ্যিকভাবে সোনা নিষ্কাশন শুরু হলেই বিঘ্নিত হবে পাহাড়ি বাস্তুতন্ত্র। তবে ব্যবসায়ীরা কথা দিয়েছেন, তাঁরা রাসায়নিক ব্যবহার করে সোনা নিষ্কাশনের কাজ করবেন না। পাহাড়ি অঞ্চলে যতটুকু সোনা নিষ্কাশন করা হবে, তা হবে গ্র্যাভিটি সেপারেশন পদ্ধতিতে। আর বাকি সোনা শহরাঞ্চলে নিয়ে এসে তবে নিষ্কাশন করা হবে। এর ফলে অবশ্য খরচ বাড়বে অনেকটাই। তাছাড়া স্কটল্যান্ডের কোথাও খুব বেশি সোনার সঞ্চয় আছে বলে মনে করছেন না ভূতাত্ত্বিকরা। আপাতত বছরে মাত্র ১২ হাজার আউন্স সোনা তোলার লক্ষমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। তবে হাজার হোক, এই সোনা যে স্কটল্যান্ডের সোনা। বাজারে এর চাহিদা অনেকটাই বেশি। গত বছরই পরীক্ষামূলকভাবে কিছুটা সোনা বাজারে আনা হয়েছিল। আর তখনই গয়না নির্মাতাদের লাইন পড়ে গিয়েছিল কাউন্টারের সামনে। স্কটিশ সোনার নেশায় আপাতত তাই সবাই বুঁদ হয়ে আছেন। কেউ সশরীরে ছুটছেন নিজের হাতে সোনা নিষ্কাশন করতে। আর কেউ অপেক্ষায় আছেন, কবে সেই সোনা বাজারে আসবে।

আরও পড়ুন
আমাজনে সোনার নদী, ‘এল-ডোরাডো’-র সন্ধান পেয়েও আতঙ্কিত নাসার বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মমির মুখে সোনার জিভ! কফিনের ঢাকনা খুলতেই অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা