দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অত্যাচারের শিকার, বিলুপ্তির মুখে জায়ান্ট আইবিস

দেখলে মনে হবে, বেশ বড়োসড়ো প্রজাতির এক সারস। লম্বা গলা, সঙ্গে মানানসই লম্বা, সরু ঠোঁট এবং পা। তবে অন্যান্য সারস জাতীয় পাখির থেকে এ বোধহয় একটু আলাদা। দাঁড়িয়ে থাকলে প্রায় ৩৯ ইঞ্চি লম্বা এই পাখিটি ‘আইবিস’ গোত্রের সবথেকে বড়ো প্রজাতি। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন— জায়ান্ট আইবিস। কম্বোডিয়ার জাতীয় পাখি। এমন হাই প্রোফাইল প্রাণীটি অস্তিত্বই আজ সংকটের মুখে…

বিজ্ঞানীরা বলেন, আইবিস প্রজাতির পাখিরা এমনিতেই বেশ প্রাচীন। এদের ফসিলও পাওয়া গেছে অনেক জায়গায়। বেশ কিছু প্রাচীন সভ্যতায় এর উল্লেখ আছে। তাদেরই এক অংশ হল জায়ান্ট আইবিস। মূলত কম্বোডিয়া এবং লাওসের কিছু কিছু জায়গাতেই পাখিটির অস্তিত্ব আছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য জায়গাতেও আগে দেখা যেত এই পাখিটিকে। কিন্তু এখন সেসব মুছে গেছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার’ বা আইইউসিএন’র তালিকা অনুযায়ী, জায়ান্ট আইবিসের অস্তিত্ব চরম সংকটে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এদের সংখ্যা ২০০-রও কম। দক্ষিণ এশিয়ার কম্বোডিয়াতেই এখন একমাত্র অস্তিত্ব এই পাখির। বাকি সমস্ত জায়গা থেকেই মুছে গেছে জায়ান্ট আইবিস। 

২০০৫ সালে কম্বোডিয়ার জাতীয় পাখির মর্যাদা পায় পাখিটি। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, হয়তো এবার হাল ফিরবে। কিন্তু অবস্থা বদলায়নি এতটুকুও। আর এসবের জন্য তাঁরা দায়ী করেছেন মানুষকেই। জায়ান্ট আইবিস প্রধানত জলাভূমি, লেক, নদী ইত্যাদির মতো নিচু জায়গায় বসবাস করে। এদিকে কম্বোডিয়ায় জনসংখ্যা যত বাড়তে থাকে, ততই নদী এবং এইসব নিচু জমির দিকে সরতে শুরু করে মানুষ। বিস্তীর্ণ বন উধাও হয়ে তৈরি হয় চাষের জমি, শহর। তখন থেকেই হারিয়ে যাওয়া শুরু জায়ান্ট আইবিসের। সেইসঙ্গে শুরু হয় শিকার। যেহেতু এইসব নিচু জায়গাতেই বাসা তৈরি করত, ফলে মাংস আর ডিম সংগ্রহের সহজ টার্গেট হয়ে যায় পাখিরা। পরে যখন নিয়ম করে এদের শিকার বন্ধ করা হল, সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হল, তখন ‘শিকার’ বদলে গেল ‘চোরাশিকারে’। 

লকডাউনের সময়ও কম্বোডিয়ার একটি জাতীয় উদ্যান থেকে জায়ান্ট আইবিসের দেহ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে দেখা গেছে, চোরাশিকার আবারও শুরু হয়েছে ভেতরে ভেতরে; আর তার বলি এই পাখিরা। দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, জায়ান্ট আইবিসের সংখ্যা বাড়ছে না। এখন কী করে এদের জীবনের রাস্তায় ফিরিয়ে আনা যায়, তারই চেষ্টায় রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে তাঁদের প্রশ্ন একটাই- আমরা কবে সচেতন হব? 

Powered by Froala Editor