ঘড়িয়াল। ভারতীয় ভূভাগে খুব পরিচিত একটি নাম। চার থেকে সাত মিটার দৈর্ঘ্যের এই সরীসৃপ প্রাণীটি কুমির প্রজাতির হলেও তার স্বভাব হিংস্র নয়। সংকীর্ণ চোয়ালের এই প্রাণীটির প্রধান খাদ্য মূলত নদীর মাছ। তাই এদের মেছো কুমিরও বলা হয়ে থাকে। প্রাণীটি বর্তমানে জায়গা নিয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায়। যমুনা-সহ একাধিক নদীতে তার আর অস্তিত্ব নেই। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রেও কমেছে সংখ্যা। তবে লকডাউনের সময় যমুনায় প্রায় এক দশক পর দেখা গেল বিপন্ন এই প্রজাতিকে।
সম্প্রতি বন-আধিকারিক সুশান্ত নন্দের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন একটি ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে যমুনার তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি ঘড়িয়াল শাবক। এই ছবি ঘিরেই উচ্ছ্বসিত পরিবেশবিদদের একাংশ। উচ্ছ্বসিত তিনি নিজেও। কারণ ২০১১ সালে শেষ যমুনায় দেখা মিলেছিল তার। বছর দশেক আগে চিরতরের জন্য যমুনা থেকে বিদায় নিয়েছিল এই বিপন্ন প্রাণীটি। তবে চম্বল নদীতে ঘড়িয়ালের বসবাস হারিয়ে যায়নি এই মাঝের বছরগুলিতে। সেখান থেকেই যমুনায় প্রত্যাবর্তন করেছে এই মেছোকুমির, তা স্পষ্ট পরিবেশবিদদের কাছে। চম্বল থেকে নদীর গতিপথের বিপরীতে ৩০ কিলোমিটার দূরে ডিমও দিয়েছিল তারা। সেই ডিম ফুটেই জন্ম নিয়েছে বেশ কয়েকটি শাবক। তবে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, ইতিমধ্যেই দুটি শাবক মারা গেছে। তবে বাকিরা বেশ সুস্থই রয়েছে। যমুনার তীরে মাঝেমধ্যেই জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি।
গত মার্চ মাস থেকেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছিল ভারত সরকার। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের প্রায় সমস্ত কলকারখানাগুলিই। বন্ধ হয়েছিল পরিবহন-সহ মানুষের অন্যান্য কার্যকলাপও। ফলে কমে এসেছিল দূষণ। যা শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছিল প্রকৃতির কাছে। ক্রমশ স্বচ্ছ হয়ে উঠছিল দেশের একাধিক নদী। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের পাশাপাশি অতি-দূষিত যমুনাতেও ঝকঝকে জলস্তর দেখা গিয়েছিল গত এপ্রিলে। সেরে উঠছিল বাস্তুতন্ত্রও। যমুনায় ফিরে এসেছিল পাখির দল এবং নানান প্রজাতির মাছ। এবার সেখানেই সংযোজিত হল বিপন্নপ্রায় প্রজাতির এই সরীসৃপ, ঘড়িয়াল।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ঘরে ফেরার তাগিদ, পায়ে হেঁটেই যমুনা পেরোচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা