দেওঘরের পেঁড়ার ভৌগোলিক স্বীকৃতির দাবি ঝাড়খণ্ডের

জয়নগরের মোয়া, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, কলকাতার রসগোল্লা, কৃষ্ণনগরের সরভাজা... বিভিন্ন জায়গা এভাবেই বিশেষ কিছু মিষ্টির ঠিকানা হয়ে উঠেছে সকলের অবচেতন মনে। এই তালিকাকে আরেকটু বাড়িয়ে বাংলার সীমানা ঠিক পেরিয়ে গেলেই সংযোজিত হবে আরও দুটি নাম— পুরীর খাজা এবং দেওঘরের পেঁড়া।

দেওঘর এবং পেঁড়া যে সমার্থক তা নতুন করে বলার কিছুই নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মিষ্টান্নের অন্যতম ঠিকানা হওয়ার দরুন কোনো স্বীকৃতি পায়নি আজও ঝাড়খণ্ডের এই অঞ্চল। এবার লিখিতভাবেই সেই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য পথে নামল ঝাড়খণ্ড। দেওঘর জেলা-প্রশাসক পেঁড়াকে দেওঘরের জিআই ট্যাগ হিসাবে চিহ্নিতকরণ করার জন্যই আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্প্রতি। 

দেওঘরের অন্যতম আকর্ষণ বৈদ্যনাথ ধাম। আর সেখানে গেলেই রাস্তার দু’ধারে সার বাঁধা মিষ্টির দোকান চোখে পড়তে বাধ্য। এই বৈদ্যনাথ ধামের প্রধান প্রসাদই হয়ে উঠেছে ক্ষীরের তৈরি এই মিষ্টি। যদিও বৈদ্যনাথ ধামে পুজোতে প্রসাদ হিসাবে পেঁড়া দেওয়া হয় না। তবু দেশ বিদেশ থেকে আগত কোটি কোটি ভক্তরা এই মিষ্টি দোকান থেকে কিনে নিয়ে যান প্রসাদ হিসাবে। এ যেন এক রীতি হয়ে উঠেছে কয়েক যুগ ধরেই। ঐতিহ্যে মিশে গেছে দেওঘরের।

পেঁড়াকে দেওঘরের ভৌগোলিক সূচকে রূপে স্বীকৃত করার দাবি বহুদিনের। তবে রাজনৈতিক স্তরে কখনোই নেওয়া হয়নি সেই উদ্যোগ। এবার দেওঘরের জেলা-প্রশাসক কমলেশ্বর প্রসাদ সিং সেটাই করে দেখালেন। কিছুদিনের মধ্যেই চেন্নাই ভিত্তিক জিআই রেজিস্ট্রেশন অফিসে এই আবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন
কমছে চাহিদা, বিলুপ্তির পথে বাংলার প্রথম ‘ব্র্যান্ডেড মিষ্টি’

জেলা-শাসকের এই ঘোষণার পরই বুধবার পেঁড়া ব্যবসায়ী সমিতির উপস্থিতিতে জেলার বিকাশ ভবনে আয়োজন করেন একটি সভার। বিষয়টির তত্ত্বাবধানের জন্য গঠিত হয় বিশেষ কমিটি। সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সমস্ত পেঁড়া প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করছে এই কমিটি।

আরও পড়ুন
২৫০ পেরিয়েছে বয়স, বিলুপ্তির পথে বাংলার প্রাচীন মিষ্টি ‘বাবরসা’

এখনও ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই পর্যটকরা দেওঘর রওনা দিলেই, আত্মীয়-পড়শিরা আবদার করে থাকেন এই লোভনীয় মিষ্টি তাঁদের জন্যেও নিয়ে আসার। পেঁড়ার ভৌগলিক উৎস হিসাবে দেওঘরকে চিহ্নিত করা হলে, সেই পরিচিতি এবং বাড়বে বহুগুণ। হয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী। পাশাপাশি আর্থিকভাবেও অবস্থা ফিরবে ব্যবসায়ীদের। এখন শুধু আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন বাবাধামের পেঁড়া ব্যবসায়ীরা। দিন গুনছেন এই স্বতন্ত্র শিল্পের অধিকার পাওয়ার আশায়...

Powered by Froala Editor