পোপের পদে বসুন কোনো মহিলা, দাবি জার্মান ক্যাথলিকদের

আচ্ছা, ভবিষ্যতে কি কোনো মহিলাকে পোপের (Woman Pope) আসনে দেখা যেতে পারে? এমন একটা প্রশ্ন শুনে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। ইতিহাসে এমনটা কখনও ঘটেনি। কিন্তু জার্মানির ফ্লুডা শহরে সমবেত মহিলারা একস্বরে বলে ওঠেন, অবশ্যই দেখা যেতে পারে। কেন নয়? সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই যখন পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসছেন মহিলারা, তখন ধর্মক্ষেত্রেও পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। এমনটাই মনে করছেন জার্মানির ক্যাথলিক খ্রিস্টান সমাজের (Catholic Community) মহিলাদের একাংশ। ইতিমধ্যে একাধিকবার পোপ ফ্রান্সিসের কাছে চার্চের রীতিনীতির আধুনিকীকরণের দাবিতে চিঠি লিখেছেন তাঁরা। কিন্তু সেইসব চিঠির কোনো উপযুক্ত উত্তর আসেনি। তাই গত মাসে আরেকবার ফ্লুডা শহরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন মারিয়া ২.০ সংগঠনের সদস্যারা।

জার্মানির মহিলাদের এই দাবি হঠাৎ মনে করিয়ে দেয় কলকাতার মহিলা পুরোহিতদের কথা। মহিলা হয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্যের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি রক্ষণশীলদের অনেকেই। তেমনই ক্যাথলিক চার্চের সমস্ত কাজে মহিলাদের সমান অধিকার, মহিলাদের পাদরি বা ধর্মযাজকের আসনে নির্বাচন করার দাবিরও বিরোধিতা উঠেছে জার্মানিতে। মারিয়া ২.০ সংগঠনের বিপরীতে গড়ে উঠেছে মারিয়া ১.০ নামের একটি সংগঠনও। তাঁদের দাবি, চার্চের নিয়মকানুনে কোনো পরিবর্তন আনারই প্রয়োজন নেই। বরং চিরাচরিত ক্যাথলিক রীতিনীতিকেই নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন রয়েছে।

তবে মারিয়া ২.০ সংগঠনের এই আন্দোলন শুধুই ক্যাথলিক রীতিনীতির পরিবর্তনের আন্দোলন নয়। বরং তার একটি বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষিতও রয়েছে। সাংবিধানিকভাবে জার্মানি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও সেখানে সমাজব্যবস্থায় চার্চের প্রত্যক্ষ ক্ষমতা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, প্রতিটা স্তরে ক্যাথলিক ধর্মের প্রভাব রয়েছে। আর এই ক্যাথলিক সংগঠনগুলির চরিত্র নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে। ২০১৮ সালে একটি রিপোর্টে দেখা যায়, গত ২ দশকে অন্তত ৩৫০০ শিশু ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে। এই তথ্য সামনে আসার পরেই ২০১৯ সালে গড়ে ওঠে মারিয়া ২.০ আন্দোলন। নিছক ভুল স্বীকার নয়, বরং ধর্মনিরপেক্ষ আদালতে অপরাধীদের শাস্তির দাবি নিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। ক্রমশ চার্চের মধ্যে লিঙ্গসাম্যের বিষয়টিও জুড়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই।

শুধুই জার্মানিতে নয়, গোটা ইউরোপজুড়েই প্রশ্ন উঠছে ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানগুলির চরিত্র সম্বন্ধে। গত মাসেই একটি রিপোর্টে দেখা যায় ফ্রান্সে ৫ দশক ধরে অন্তত আড়াই লক্ষ শিশু ধর্মযাজকদের যৌনলিপ্সার শিকার হয়েছে। এই তথ্য সামনে আসার পর ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাংগঠনিক ত্রুটির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ পোপ ফ্রান্সিসও। কিন্তু মারিয়া ২.০ আন্দোলন সম্পর্কে তিনি এখনও নিশ্চুপ। বরং এই আন্দোলন ক্যাথলিক সমাজের ঐক্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে মানুষ যখন স্বতষ্ফূর্তভাবে ক্যাথলিক সমাজের সংস্কার দাবি করে রাস্তায় নেমেছেন, তখন তার প্রভাবকে অস্বীকার করার কোনো জায়গাই থাকে না।

আরও পড়ুন
২ লক্ষাধিক শিশুর যৌন নিগ্রহ গির্জায়! তদন্তে তোলপাড় ফ্রান্স

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রেমের কাছে নতিস্বীকার বিশপের, ছাড়লেন গির্জাও