প্রেমের কাছে নতিস্বীকার বিশপের, ছাড়লেন গির্জাও

১১ বছর আগে স্পেনের কনিষ্ঠতম বিশপ হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন। রক্ষণশীল মানসিকতার জন্য একাধিকবার সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে সেইসব সরিয়ে রেখে আজ তিনি সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। শেষ পর্যন্ত এক নারীর প্রেমে পড়েই চার্চ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কাতালুনিয়ার সলসোনা গির্জার বিশপ জেভিয়ার নোবেল (Xavier Novel)। হঠাৎ তাঁর এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছিলেন সকলেই। প্রায় একমাস ধরে আলোচনা চলার পর অবশেষে সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকৃত কারণ স্বীকার করলেন নোবেল।

৫২ বছরের বিশপ নোবেলের জীবনে এই আকস্মিক পরিবর্তন ডেকে এনেছেন স্পেনের মনস্তাত্ত্বিক তথা লেখিকা সিলভিয়া কাবালোল। মূলত যৌনতানির্ভর উপন্যাস লেখার জন্যই জনপ্রিয় সিলভিয়া। আর নোবেলের মতো রক্ষণশীল খ্রিস্টানের কাছে উপন্যাস মানেই তা শয়তানের দূত। সেই উপন্যাসের বিষয়বস্তু যৌনতানির্ভর হলে তো আর কথাই নেই। আর তাই শেষ পর্যন্ত প্রেম ও ধর্মের মধ্যে যেকোনো একটাকে বেছে নিতে হত। প্রাক্তন বিশপ নির্দ্বিধায় জানিয়ে দিলেন, তিনি প্রেমের কাছেই নতিস্বীকার করতে চান।

২০১০ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে সলসোনা গির্জার বিশপ হিসাবে শপথ নেন নোবেল। এর আগে স্পেনের কোনো গির্জায় এত কম বয়সে কেউ বিশপ পদে আসেননি। বিশপ হিসাবে শপথ নেওয়ার পর প্রথমেই সমকামীদের জন্য বিশেষ সংশোধনী প্রক্রিয়া চালু করেন নোবেল। সেইসময় কয়েকজন রক্ষণশীল বাদ দিয়ে গোটা শহর তাঁর নিন্দায় সরব হয়ে ওঠে। তবে নোবেল নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, খ্রিস্টান ধর্ম মেনে চলতে গেলে সমকামিতার বিরোধিতা করতেই হবে। শুধু তাই নয়, প্রেমের ক্ষেত্রে একাধিক নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার পক্ষপাতি ছিলেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে নোবেল জানিয়েছেন, তাঁর জীবনেও প্রেম এই প্রথম আসেনি। বিশপ পদে শপথ নেওয়ার কয়েক বছর আগেই ১৮ বছর বয়সী এক তরুণীর প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। তবে সেদিন ধর্মের ডাক ছিল প্রবল। এখন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনি জীবনে প্রেমের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। শুধু তাই নয়, পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে তিনি সমস্ত ধরণের প্রেমকে স্বীকৃতি জানানোর পক্ষেও সওয়াল করেছেন।

তবে বিশপ থাকাকালীন নোবেলের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়তো কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার জন্য সওয়াল করা। এই সময়েই সিলিভিয়ার সঙ্গে আলাপ হয় নোবেলের। ক্রমে সেই সম্পর্ক আরও গভীরতা লাভ করে। গির্জার মধ্যেও শুরু হয়ে যায় গুঞ্জন। বিশপের এমন আচরণ মেনে নিতে চাইছিলেন না সহযোগীদের অনেকেই। তবে কোনোরকম প্রতিবাদ গড়ে ওঠার আগেই সরে দাঁড়ালেন নোবেল স্বয়ং। বাকি জীবনটা চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান তিনি। ইতিমধ্যে স্পেনের কৃষিবিভাগে চাকরির জন্যও আবেদন জানিয়েছেন। গির্জার জীবন ছেড়ে সিলভিয়ার সঙ্গে ছোট্ট সংসারে সুখেই থাকবেন বলে মনে করছেন নোবেল।

আরও পড়ুন
সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি গির্জার, নতুন যুগের সূচনা ফিদেল কাস্ত্রোর দেশে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অসমবয়সি দুই শিল্পীর বন্ধুত্বকে সম্মানজ্ঞাপন, গির্জাতেই গড়ে উঠছে সংগ্রহশালা