শের শাহের মতোই প্রবল বিক্রমে লড়াই, কার্গিল যুদ্ধের নায়ক বিক্রম বাটরা

সহযোদ্ধাদের আড়ালে রেখে এগিয়ে চলেছেন ২৫-এর এক যুবক। সম্মুখসমরে একের পর এক শত্রুকে ঘায়েল করছেন। আর প্রতিবার একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার আগে চিৎকার করে উঠছেন ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর’ (Ye Dil Mange More)। সম্প্রতি এই বাস্তব ঘটনাকে নিয়েই মুক্তি পেয়েছে সিদ্ধার্থ মালহোত্রার ছবি ‘শের শাহ’। হ্যাঁ, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সেই যুবক শের শাহ নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি কার্গিল যুদ্ধের শহিদ ক্যাপ্টেন বিক্রম বাটরা(Vikram Batra)। পরমবীর চক্র (Param Vir Chakra) জয়ী যোদ্ধার আজ জন্মদিন।

সালটা ১৯৯৯। বিশ শতকের শেষ বছরেই কাশ্মীর সীমান্ত অঞ্চলে সবচেয়ে বড়ো অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। কার্গিল যুদ্ধ নামে পরিচিত সেই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন বিজয়। সেই নামকে সার্থক করে যে কয়েকজন সাহসী যোদ্ধা দেশকে বিজয় এনে দিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন বাটরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ৫১৪০ এবং ৪৮৭৫ পয়েন্টের যুদ্ধে তাঁর অসীম সাহসিকতা অবাক করেছিল সকলকে। সহযোদ্ধাদের তিনি আড়াল করে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, তাঁদের তো স্ত্রী-পরিবার রয়েছে। তাঁদের জীবিত শরীরে ফিরে যাওয়াও কর্তব্য। বরং মরতে হলে তিনি নিজেই মরবেন। তাঁর যে আরও বেশি কিছু চাই।

১৯৭৪ সালে হিমাচলপ্রদেশের পলমপুর গ্রামে জন্ম বিক্রম বাটরার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ডিএভি স্কুল এবং তারপর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন বিক্রম বাটরা। এই সময় তিনি এবং তাঁর যমজ ভাই বিশাল জাতীয় স্তরের টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেন। পাশাপাশি ক্যারাটেতে গ্রিন বেল্ট পুরস্কারও পান তিনি। ডিএভি কলেজ থেকে মেডিক্যাল সায়েন্সে বিএসসি করার পর বিক্রম যোগ দিয়েছিলেন বায়ুসেনায়। তবে তখন এনসিসি সদস্য হিসাবে। কিছুদিনের মধ্যেই সেন্ট্রাল ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্থায়ীভাবে সেনাজীবনকেই বেছে নিয়েছিলেন বিক্রম।

১৯৯৭ সালে স্থায়ীভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বিক্রম বাটরা। আর তার ২ বছরের মধ্যেই এসে গিয়েছিল অন্তিম যুদ্ধের আহ্বান। যুদ্ধক্ষেত্রে রওয়ানা হওয়ার আগে বিক্রম তাঁর বন্ধুদের বলেছিলেন, হয় তিনি পাক অধ্যুষিত কার্গিলে ভারতের বিজয় পতাকা তুলে ফিরবেন। আর নয়তো সেই ভারতের জাতীয় পতাকাতে আবৃত হয়েই ফিরবে তাঁর মৃতদেহ। কথা রেখেছিলেন বিক্রম। তবে সমস্ত গল্পের শেষেই বোধহয় একটা করে ট্র্যাজেডি থাকে। ক্যাপ্টেন বাটরার জীবনও যে সম্পূর্ণ পিছুটানহীন ছিল না। ততদিনে তাঁর সঙ্গে সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ডিম্পল চিমা। ডিএভি কলেজেই পরিচয় দুজনের। যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বিক্রম নিয়মিত চিঠি লিখতেন ডিম্পলকে। ডিম্পল সচরাচর কিছু লিখতেন না। কিন্তু যেদিন ডিম্পলের চিঠি গিয়ে পড়ল কার্গিলের মাটিতে, তার পরেরদিনই ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে যুদ্ধে প্রাণ হারালেন বিক্রম। ডিম্পল আজও থেকে গিয়েছেন বিক্রমের স্বপ্নকে বুকে নিয়েই। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা সম্মান পেয়েছেন বিক্রম বাটরা। পরমবীর চক্র সম্মানের পাশাপাশি তাঁর নামে কলেজও গড়ে উঠেছে। ডিএভি কলেজে স্থাপনা করা হয়েছে তাঁর মর্মর মূর্তি। মৃত্যুকে তুচ্ছ করেই যে এগিয়ে গিয়েছিলেন বিক্রম বাটরা। আজও তাই কার্গিল যুদ্ধের অসীম সাহসিকতার কাহিনির মধ্যেই জীবিত তিনি।

আরও পড়ুন
যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ হারিয়েছেন যেসব চিত্রসাংবাদিক

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
যুদ্ধ, প্রেম, ‘বিকল্প যৌনতা’ ও হাজার তারার গল্প