চিকিৎসাতেও বৈষম্যের শিকার হন মহিলা রোগীরা, জানাল সাম্প্রতিক গবেষণা

শুধু সমাজই নয়, লিঙ্গ বৈষম্য সুস্পষ্ট চিকিৎসাক্ষেত্রে ও সাধারণ মানুষের মননেও। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করল গবেষণা। চিকিৎসক-সহ যে কোনো পর্যবেক্ষকই, সমানভাবে আহত একজন পুরুষের থেকে একজন মহিলার ব্যথাকে খানিকটা খাটো করেই দেখেন। আর যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ে সাইকোথেরাপি থেকে শুরু করে তাঁর চিকিৎসায়।

সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ পেন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। গবেষণায় জড়িত ছিলেন মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব এবং নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক এলিজাবেথ লসিন। লসিন জানাচ্ছেন, পৃথকভাবে করা দুটি ভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলই জানান দিচ্ছে এই বৈষ্যমের কথা।

প্রথম পরীক্ষাটি করা হয়েছিল ৫০ জন রোগীর ওপরে। তাঁদেরকে হাসপাতালের ডেটাবেস থেকে সমানভাবে আহত পুরুষ ও মহিলা রোগীদের ওপর অস্ত্রোপচারের ভিডিও দেখানো হয়। তারপর তাঁদের নিজেদের অনুভূত ব্যথার প্রেক্ষিতে তাঁরা যন্ত্রণার মাত্রা নির্ধারণ করেন ভিডিও-তে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের। সেই রেটিং থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় বৈষম্যের বিষয়টি। তবে সেখানেই থেমে ছিল না পরীক্ষা। দ্বিতীয় ধাপে, সমানভাবে আহত রোগীদের মৌখিক ভঙ্গির বিশ্লেষণ করা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। ‘ফেসিয়াল অ্যাকশন কোডিং সিস্টেম’ নামাঙ্কিত এই সফটওয়্যারের রিপোর্ট কিন্তু অন্য কথাই বলে। 

দ্বিতীয় পরীক্ষায়, এই একই সমীক্ষা করা হয় আরও ২০০ জন রোগীর ওপরে। সাধারণ মানুষের থেকে অভিমত নেওয়া হয় যন্ত্রণার মাত্রার। আর তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছন গবেষকরা। লুসিন-সহ অন্যান্য সহকারী গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই আসলে মৌখিক ভঙ্গির ওপরে নির্ভর করেই ভুল সিদ্ধান্ত নেন পর্যবেক্ষকরা। আসলে যন্ত্রণার মাত্রা নির্ধারণে আমরা মুখের বিভিন্ন পেশির গতিবিধিকেই পর্যবেক্ষণ করি। আর সেখানেই হয়ে যায় ভুল। লুসিনের অভিমত, মহিলাদের মৌখিক ভঙ্গি পুরুষদের তুলনায় অনেকক্ষেত্রেই অধিকতর অভিব্যক্তিপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে খাটো করে দেখা হয় তাঁদের যন্ত্রণাকে।

আরও পড়ুন
মহিলাদের অশালীনতাই ধর্ষণের কারণ, মন্তব্য ইমরান খানের

তবে এই প্রাথমিক ‘বিচার’ যে চিকিৎসাকেও ভুল পথে চালিত করে, সে ব্যাপারেই সতর্ক করেছেন লুসিন। গতনুগতিকভাবে এই বিচারের ওপর নির্ভর করেই মহিলা রোগীদের ক্ষেত্রে কম মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা। কখনও থেরাপির ক্ষেত্রেও থেকে যায় এই বৈষম্য। তবে এই সমস্যার সমাধান কী? গবেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র যথার্থ মেডিক্যাল রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থা নিতে হবে চিকিৎসদের। নাহলে, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বিঘ্নিত হবে সাম্য…

আরও পড়ুন
নিধন রুখতে বৃক্ষ-আলিঙ্গন মহিলাদের, উত্তরাখণ্ডে ‘চিপকো আন্দোলনে’র ছায়া

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সমাধিফলকে নিজের নাম! আদালতের দ্বারস্থ মহিলা