৪ কোটি টায়ারের ‘গোরস্থান’, ভবিষ্যৎ কী?

শহরের কিছু দূরেই পড়ে রয়েছে অসংখ্য পরিত্যক্ত টায়ার। কয়েক হাজার নয়, সংখ্যাটা ৪ কোটিরও বেশি। দীর্ঘদিন ধরে এই টায়ারের স্তূপ জমতে জমতে ক্রমশ পৃথিবীর বৃহত্তম আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। কুয়েত শহরের এই পরিত্যক্ত টায়ার(Tyre) অপসারণের কাজে এবার হাত লাগাল এক ভারতীয় কোম্পানি। হায়াদ্রাবাদের ইপিএসসিও কোম্পানির উদ্যোগে ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি টায়ার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর সেইসমস্ত টায়ার পুনর্ব্যবহারের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।

কুয়েত(Kuwait) শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরত্বেই গড়ে উঠেছিল এই আবর্জনার স্তূপ। রাবারের আবর্জনা থেকে সচরাচর দুর্গন্ধ ছড়ায় না। তাই শহরবাসীও প্রথম প্রথম খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছিল এক নতুন উৎপাত। মাঝে মাঝেই আগুন লাগছিল সেই আবর্জনার স্তূপে। বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছিল শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও। ফলে শহর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ওই আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে ফেলে সেখানে নতুন আবাসন তৈরি করা হবে। কিন্তু টায়ারের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ। এত টায়ার পুনর্ব্যবহারের কাজটা নেহাৎ সহজ নয়।

ইপিএসসিও কোম্পানির উদ্যোগে ইতিমধ্যে সেই কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। টায়ারের পলিমার ভেঙে সেখান থেকে যে উপাদান পাওয়া যাবে, তা বাড়ি তৈরির টাইলস তৈরিতে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এই কাজে আগামী এক বছরের মধ্যে অন্তত ৩০ লক্ষ টায়ার ব্যবহার করা হবে। তবে বাকি টায়ার অন্য নানা পদার্থ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাইরোলিসিস প্রক্রিয়ায় সেইসব টায়ার থেকে বিশেষ ধরনের তেল এবং কার্বন ব্ল্যাক ছাই তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। এই দুই উপাদানই নানা ধরণের ভারী শিল্পের কারখানায় কাজে লাগে।

আপাতত বছরে ৩০ লক্ষ টায়ার প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে ইপিএসসিও কোম্পানি। তবে এভাবেও সমস্ত আবর্জনা সরিয়ে ফেলতে ১৪ বছর লেগে যাবে। তার মধ্যে নতুন আবর্জনার স্তূপও জমা হবে। কুয়েতের মতো দেশে গাড়ির সংখ্যা তো নেহাৎ কম নয়। ২০১৯ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ৪৫ লক্ষ মানুষের জন্য রয়েছে ২৪ লক্ষ গাড়ি। ফলে পরিত্যক্ত টায়ারের সংখ্যাও খুব একটা অবাক করে না। তবে এর মধ্যেই কুয়েত শহর প্রশাসন জানিয়েছে, টায়ার প্রক্রিয়াকরণের কাজে ইপিএসসিও কোম্পানিকে সবরকম সাহায্য করা হবে। সরকারিভাবে নতুন পরিকাঠামোও তৈরি করা হবে। যাতে অতি দ্রুত জমে থাকা আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি নতুন আবর্জনা অপসারণের কাজেও হাত লাগানো যায়। কুয়েত তো বটেই, পৃথিবীর বুক থেকে এক বিরাট আবর্জনার বোঝা হালকা হতে চলেছে।

আরও পড়ুন
আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রাম

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অযোধ্যা জুড়ে সাফাই অভিযান, দুশো বস্তা আবর্জনা সরালেন স্বেচ্ছাসেবকরা