স্বাধীনতার জন্য তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক, আজ জুতো সেলাই করে পেট চালান মুক্তিযোদ্ধা

সাদা দাড়ি। মোটা কাচের চশমা। একটা সাধারণ জামা আর ধুতি পরে রাস্তার ধারে একমনে জুতো সেলাই করে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধ। কিন্তু হাতের পেশি এখনও টানটান। হবে নাই বা কেন! একটা সময় এই হাতই দেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল শত্রু সৈন্যের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সেই দৃঢ় হাত আজ জুতো সেলাইয়ের কাজ তুলে নিয়েছে অভাবের তাড়নায়। তিনি, আব্দুল বারিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কাণ্ডারী।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সম্মান জোটেনি তাঁর। ১৯৪২ সালে জন্ম আব্দুল বারিকের। যে সময় বড় হচ্ছেন, সেটা মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি। তিনিও জড়িয়ে পড়লেন সেই সংগ্রামে। ৮ নং সেক্টর থেকে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন তিনি। ভারতের সেনার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কুষ্টিয়ার উথলি, আলমডাঙা-সহ বিভিন্ন প্রান্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। লক্ষ্য ছিল একটাই, দেশকে স্বাধীন করা।

কিন্তু স্বাধীনতার পর? না, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনও সম্মান পাননি তিনি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় নাকি তিনি তালিকাভুক্ত হননি। অনেকবার আবেদন করেছিলেন আব্দুল বারিক এবং তাঁর পরিবার। কিন্তু, ফল হয়নি কিছুই। কোনও ভাতাও পাননি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এলাকার মানুষ চিনলেও চেনেনি তাঁর নিজের দেশই। বয়সের ভারে এখন সেই হালও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। অবস্থা এমনই, অসুস্থ স্ত্রীর শুশ্রূষাও করতে পারছেন না। তিনি নিজেও বৃদ্ধ হয়ে অপ্রেছেন। ছেলে মেয়েরা যে যার মতো বাইরে। পেট চালানোর জন্য জুতো সেলাইকেই শেষমেশ বেছে নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা বারিক ভাই। থাকেন কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার দেশোয়ালি পাড়ার রামচরণ চৌধুরী রোডে। রাস্তার এক কোণে, চাদর বিছিয়ে জুতো সেলাই করে চলেছে শিরা ওঠা হাত দুটো। সুবিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছেন প্রায়। এখন অপেক্ষা, আসল মুক্তির।


ঋণ - somoyekhon.com