এই প্রথম, জীবিতাবস্থায় ধরা পড়ল ‘স্বচ্ছ মস্তিস্ক’-এর মাছ

মাছের মাথার ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা, স্নায়ুকলা, অক্ষিগোলক। প্রতিটা অঙ্গই দেখা যাচ্ছে একদম স্পষ্টভাবে। আর মস্তিষ্কের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে সবুজ আভা। না, এক্স-রে স্ক্যান কিংবা অন্য কোনো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নয়, এই ছবি তোলা হয়েছে সাধারণ ক্যামেরাতেই। তবে এই বিশেষ প্রজাতির মাছের মস্তিষ্কের বাইরের ত্বক স্বচ্ছ হওয়াতেই, স্পষ্ট দেখা যায় তার অভ্যন্তরীণ গঠন।

এই বিশেষ প্রজাতির মাছটি পরিচিত ব্যারেল-আই ফিশ (Barreleye Fish) নামে। অবশ্য বিজ্ঞানের ভাষায় তার নাম ম্যাক্রোপিনা মাইক্রোস্টোমা। বহুদিন আগেই গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন এই বিশেষ প্রজাতিটিকে। তবে এতদিন পর্যন্ত কেবলমাত্র মৃত নমুনা দেখেই তাদের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার প্রথমবারের জন্য জীবিত অবস্থায় ধরা পড়ল এই প্রাণী।

সমুদ্রপৃষ্ঠের ৬০০ থেকে ৮০০ মিটার গভীরে সাধারণত বসবাস করে এই মাছ। দিনের বেলায় সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় সামান্যই। ফলে বলা যেতে পারে, একপ্রকার অন্ধকারেই দিন যাপন করে এই প্রাণীটি। আর সেই কারণেই বায়োলুমিনেসেন্টের ক্ষমতা রয়েছে এই মাছের। সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে জোনাকি কিংবা অনেক অণুজীব হালকা নীল কিংবা সবুজ রঙের জ্যোতি উৎপন্ন করে। এই ঘটনাটিকেই বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্ট বা জৈব-বিকিরণ। ব্যারেল-আই ফিশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই। শিকার ধরার জন্যই এভাবে বিবর্তিত হয়েছে এই মাছ। একই কারণে স্বচ্ছ তাদের মস্তিষ্কের বাইরের ত্বক। 

ত্বক স্বচ্ছ হওয়ার কারণে বাইরে থেকেই দৃশ্যমান হয় এই মাছের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ গঠন। অন্যদিকে অন্ধকারে বায়োলুমিনেসেস্টের দৌলতে মস্তিষ্কের এই অংশগুলি উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে থাকায় তা দেখে আকৃষ্ট হয় ছোটো ছোটো প্রাণী। এভাবেই শিকার করে ব্যারেল-আই ফিশ। 

সমুদ্রে দূরনিয়ন্ত্রিত ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার সময়, এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র ৮ বার দেখা মিলেছে এই প্রাণীর। পাওয়া গেছে মাত্র গোটা পাঁচেক মৃতদেহ। তা নিয়েই এতদিন গবেষণা চলেছে গবেষকদের। এবার জীবিত নমুনা হাতে পাওয়াও গভীর সমুদ্রের এই প্রাণীটির সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে বলেই আশাবাদী গবেষকরা…

Powered by Froala Editor

Latest News See More