বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েও অটুট জেদ, গলফ-দুনিয়ায় নজির ব্রিটিশ খুদের

বছর দেড়েক আগের কথা। মহামারীর কারণে তালা পড়েছিল গোটা বিশ্বজুড়ে। গৃহবন্দি হয়েছিল সকলেই। স্কুল নেই। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই। নেই দু’দণ্ড পার্কে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগও। ফলে একঘেঁয়েমি কাটাতে বাড়ির বাগানেই গলফ (Golf)খেলা শুরু করেছিল যুক্তরাজ্যের মাচেনের (Machen) বছর পাঁচেকের কিশোর ফ্রেজার হ্যারিস (Fraizer Harris)। বর্তমানে বিশ্বের প্রথম সারির তরুণ গলফ খেলোয়াড়দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ফ্রেজার। আগামী বছর আমেরিকায় আয়োজিত হতে চলা জুনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নের যোগ্যতাও অর্জন করে ফেলেছে ব্রিটিশ কিশোর।

‘কোথা হইতে কি হইয়া গেল, মোহন পলাইয়া গেল’। হ্যাঁ, ফ্রেজারের গল্পটা সেই দুর্ধর্ষ মোহন সিরিজেরই অংশ যেন। যে খেলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় মাত্র দেড় বছরের, সেই মাঠেই এখন তাঁর প্রতাপ রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। বিশ্বের তাবড় গলফারদেরও ঘোল খাওয়াতে পারে এই ব্রিটিশ খুদের দাপট। কিন্তু কীভাবে হঠাৎ করে এসে পড়া গলফের জগতে? 

লকডাউনে বাড়িতে বসে ‘দ্য শর্ট গেম’ নামের একটি তথ্যচিত্র দেখেছিল খুদে ফ্রেজার। গলফের ওপর নির্মিত সেই তথ্যচিত্রটি দেখেই প্রথম খেলাটির ব্যাপারে আগ্রহে জন্মায় তার। শুরু হয় বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডে গলফ খেলার তোড়জোর। কয়েকদিনের মধ্যেই গলফ যেন চেপে বসেছিল নেশার মতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টাইগার উডস আর ররি ম্যাকলিরয়ের ভিডিও দেখত ফ্রেজার। মাঠে নেমে পড়া তারপরেই। প্রথম লকডাউন ওঠার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গলফের প্রশিক্ষণ। সেই ক্লাবেই প্রথম টুর্নামেন্ট খেলার। তারপর একের পর এক জয়ের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যাওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের দোরগোড়ায়।

ফ্রেজারের এই উত্থান আশ্চর্যকর তো বটেই। তবে তার চেয়েও বেশি অবাক করবে ছোট্ট কিশোরের ব্যক্তিগত জীবনের লড়াইয়ের গল্প। সাইটিক ফাইব্রিওসিস নামের বিরল একটি রোগে আক্রান্ত উদীয়মান গলফ তারকা। মূলত, এই রোগে আক্রান্ত হলে ঘন থেকে অতিঘন লালাক্ষরণ হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির। ভয়ঙ্করভাবে প্রভাবিত হয় ফুসফুসও। সেই প্রতিকূলতার সঙ্গেই ক্রমাগত লড়াই করে যাচ্ছে ফ্রেজার। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্টের কারণেই তাঁকে সাহায্য নিতে হয় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিংবা নেবুলাইজারের। দিনে নিয়ম করে খেতে হয় ৫০টি ট্যাবলেট। তবে তারপরেও গলফের মাঠে অদম্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ফ্রেজার। 

আরও পড়ুন
সুন্দরবনের গ্রামে নয়া বইঘর, দিনবদলের স্বপ্নে বুঁদ খুদেরাও

সবমিলিয়ে ইতিমধ্যেই ১১টি ট্রফি পকেটস্থ করেছে ফ্রেজার। যুক্তরাষ্ট্রের কিডস চ্যাম্পিয়নশিপেও পেয়েছে মেডেল। এখন লক্ষ্য, যুব-চ্যাম্পিয়নশিপে জয় ছিনিয়ে আনা। তবে সেখানেও চ্যালেঞ্জ আর্থিক প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই ত্রাণ সংগ্রহ করছেন ফ্রেজারের পরিবার। ট্যুরের খরচ ছাড়াও, যে চিকিৎসার বাড়তি খরচ রয়েছে কাঁধের ওপর। তবুও এইসব প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরির স্বপ্ন দেখছে ফ্রেজার। 

আরও পড়ুন
১১ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার-লেখক পুনের খুদে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৩ লাখ গৃহহীনকে আশ্রয় দিতে পারে ব্রিটেনের গলফ কোর্স