প্রয়াত বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত, বাকি রয়ে গেল তাঁর ‘অধ্যাপনা’

বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৩ বছর। তবে থেমে গেল বর্ণময় সৃষ্টিকে, নতুনত্বকে খুঁজে বের পথ চলা। বৃহস্পতিবার রাত ১২.১৫ মিনিটে নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হলেন বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত। প্রাথমিকভাবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হলেও, তা স্পষ্ট নয়। কারণ শৌচাগারেই অস্বাভাবিকভাবে মিলেছে তাঁর দেহ। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ঘনীভূত হচ্ছে রহস্যের জট।

‘মেনস ফ্যাশন’-এর কথা উঠলেই অবাধে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। তিন দশক ধরে পুরুষদের ফ্যাশনের ক্ষেত্রে একরকম ট্রেন্ড হয়ে গেছেন তিনি। ১৯৯১ সালে শুরু হয়েছিল তাঁর এই কর্মযজ্ঞ। প্রথম পরিবার এবং বন্ধুদের পোশাক ডিজাইনিং দিয়েই শুরু করেছিলেন কাজ। বিয়েবাড়িতে পুরুষদের ম্রিয়মান সাজ তাঁকে ভাবিয়েছিল সে সময়। তবে ধীরে ধীরে তাঁর কাজ ছড়িয়ে পড়ে পরিচিতের পরিধি থেকে সারা দেশে। আন্তর্জাতিক স্তরেও জায়গা করে নিয়েছিল তাঁর ব্র্যান্ড ‘ব্র্যান্ড শর্বরী’।

পরবর্তীকালে যদিও পারিবারিক সমস্যার কারণেই এই ব্যবসা থেকে সরে এসেছিলেন তিনি। নতুন করে তৈরি করেছিলেন ‘ব্র্যান্ড শূন্য’। গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন রেশমি বাগচীর সঙ্গে। আর তারপরেই কার্যত মেনস’ ফ্যাশনের পাশে নতুন করে হাত লাগান মহিলাদের ফ্যাশনেও। জীবনের শেষ সময় অবধি ‘শূন্য’-এর পুরো সৃজনশীল বিভাগটিই দেখাশোনা করতেন তিনি।

সচিন তেন্ডুলকর থেকে অমিতাভ বচ্চন - দেশের প্রথম সারির অভিনেতা থেকে শুরু করে ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সকলেরই পছন্দের ঠিকানা ছিল শর্বরী দত্তের ব্র্যান্ড। তাঁর কাছে শরণাপন্ন হননি এমন তারকা ভারতীয় ভূভাগে বিরল। অভিনেতা সৃজিত মুখার্জির রিসেপশনের জন্য পোশাক ডিজাইনের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। 

পুরুষদের ফ্যাশন মানেই যে পশ্চিমী পোশাক সেই বদ্ধমূল ধারণাকেই উপড়ে ফেলেছিলেন শর্বরী দত্ত। চিনতে শিখিয়েছিলেন এথনিকের মধ্যেও ফুটিয়ে তোলা যায় সামঞ্জস্যপূর্ণ আধুনিকতা। ফুটিয়ে তোলা যায় নতুনত্ব। তাঁর হাত ধরেই বাংলা তথা ভারত শিখেছিল রঙিন ধুতির ব্যবহার। হায়ারোগ্লিফিক কিংবা যামিনী রায়-ও যে ফ্যাশনের অংশ হয়ে উঠতে পারে তাও সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন শর্বরী দত্ত। শূন্য থেকে শুরু করেই নিজস্বতা, অভিনবত্ব এবং একনিষ্ঠার জোরেই গড়ে তুলেছিলেন একটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠান করে তুলেছিলেন নিজেকে।

তবে ফ্যাশন ডিজাইনার কথাটাতেই ঘোরতর আপত্তি ছিল তাঁর। বরং ‘রিভাইভালিস্ট’ বলেই নিজের পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করতেন তিনি। হ্যাঁ। রিভাইভই তো বটে। পাশ্চাত্যকে আত্মসাৎ করার ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহ্যকেই ঢাল করে জনপ্রিয় করে তোলা তো রিভাইভ-ই। নব্বইয়ের দশক থেকে যার পথপ্রদর্শক হয়তো একমাত্র শর্বরী দত্তই। ইচ্ছে ছিল অধ্যাপক হওয়ার। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। নাকি হয়েছিল? মাত্র আড়াই দশকের সক্রিয় কর্মজীবনে মেনস’ ফ্যাশনে একপ্রকার অধ্যাপনাই তো করে গেলেন তিনি। তবে বাকি থেকে গেল আরও অনেক অনেক ক্লাস। সব কাজ গুছিয়ে রাখার আগেই চোখ বুজলেন শর্বরী দত্ত। শেষ হল একটা অধ্যায়...

আরও পড়ুন
যুদ্ধের সমাপ্তি, প্রয়াত ভারতীয় সংস্কৃতির ‘রণনেত্রী’ কপিলা বাৎসায়ন

Powered by Froala Editor