কৃষিক্ষেত্রেও ‘বেসরকারিকরণ’? কৃষি সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক চরমে

একের পর এক অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হয়েই চলেছে কেন্দ্র। কৃষিপণ্য এবং ফসল বিক্রির বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে আনতে গত জুন মাসেই তিনটি সংশোধনী বিল প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে সেই ‘কৃষক বিরোধী বিল’ নিয়েই উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশের পরিস্থিতি। প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের বহু কৃষক সংগঠনের সদস্যরা। এবার সেই অভিযোগ তুললেন এনডিএ-এর শরিক আকালি দলের মন্ত্রী হরসিমরত কৌর বাদল। 

বৃহস্পতিবার মোদীর মন্ত্রিসভাকে বিদায় জানালেন হরসিমরত কৌর। ইস্তফা দিলেন খাদ্য এবং প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রক থেকে। আকালি দলের একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন তিনিই। উল্লেখ্য প্রথম থেকে এই বিলের বিরুদ্ধে চুপ থাকলেও গত মঙ্গলবার থেকে মুখ খুলতে দেখা যায় তাঁকে। প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন এবং আন্দোলনের চাপেই কি সিদ্ধান্ত বদল করলেন তিনি? তবে হরসিমরত জানিয়েছেন প্রথম থেকেই তাঁর এই বিষয়ে আপত্তি থাকলেও, সে কথায় কান দেয়নি কেন্দ্র। বরং কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা না বলে, আলোচনা না করেই সরকার পাশ করিয়েছে এই বিল, এমন গভীর অভিযোগই তুলছেন তিনি।

কিন্তু কী বলা হয়েছে এই তিনটি সংশোধনী বিলে? প্রথমত বেসরকারি যে-কোনো সংস্থা এখন থেকে সরাসরি ফসল কিনতে পারবে কৃষকদের থেকে। তার জন্য কোনো সরকারি অনুমতি লাগবে না। এবং কৃষকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার এই চুক্তিতে কোনোরকম হস্তক্ষেপও করবে না সরকার। সেখানেই উঠছে প্রশ্ন। কৃষিক্ষেত্রেও এই ‘বেসরকারিকরণ’-এর জন্য সঠিক দাম পাবেন কি কৃষকরা? সরকারের ন্যূনতম সমর্থন মূল্যে ফসল কেনার ব্যাপারটিও উঠে গেলে চরম বিপদে পড়বেন বলেই মনে করছেন কৃষকরা। 

দ্বিতীয়ত ইলেকট্রনিক ট্রেডিংয়ের মাধ্যমেই এবার থেকে ফসল বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যেও ফসল বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। লাগবে না কোনোরকম শুল্ক। তবে এখানেও ধন্ধ তৈরি হচ্ছে যে কতটা লাভবান হবেন তাঁরা? প্রযুক্তি এখনও অনুপস্থিত প্রান্তিক মানুষদের কাছে। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রসঙ্গ থেকেই যাচ্ছে, যতই কেন্দ্র বলুক অবসান হতে চলেছে দালাল রাজ।

অন্যদিকে আলু, পেঁয়াজের মতো শস্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারেও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন কৃষকেরা। এই নতুন কৃষি বিলের কারণে বেসরকারি সংস্থার পুতুল হয়ে যাবে বলেই দাবি তুলছেন বিভিন্ন কৃষক সংস্থা। দাবি কেন্দ্রের বিরোধী দলগুলিরও। এমনকি আকালি ছাড়া অন্যান্য এনডিএ-এর সমর্থক দলগুলির আওয়াজও এর বিপক্ষেই। তবে এই বিতর্কের মধ্যে একপ্রকার নিরুত্তর কেন্দ্র। এই আইন প্রণয়ন করেই কৃষকদের ন্যূনতম অধিকারটুকুও কি তবে খর্ব করতে চলেছে কেন্দ্র? এই প্রশ্নই এখন ভেসে বেড়াচ্ছে সর্বস্তরে...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ধানের জমিতেই শুরু হতে চলেছে মাছচাষ, কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব পুরুলিয়ায়

More From Author See More