আগের রাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যেই জঙ্গল থেকে হাতিদের মর্মান্তিক আর্তনাদ শুনেছিলেন অনেকে। সকাল সকাল জঙ্গলে পৌঁছেই দেখলেন একসঙ্গে ১৮টি হাতি মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কেউ গড়িয়ে পড়েছে নিচে। ১২ মে আসামের নগাঁও জেলার এই ঘটনা রীতিমতো চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছিল। দেশজুড়ে চোরাশিকারীদের উপদ্রব তো লেগেই আছে। তার মধ্যে এতগুলি হাতির মৃত্যুর কারণ কী? সরকারিভাবে বজ্রপাতকেই দায়ী করা হলেও তা মানতে চাননি পরিবেশকর্মীদের অনেকেই।
“আমরা বারবার বলে এসেছি, মৃত্যুর তদন্ত হোক। প্রকৃত ময়না তদন্তের রিপোর্ট সামনে আসুক। কিন্তু ২ সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কেন ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারল না বনবিভাগ? তাহলে কি কোনো সত্যিকে চাপা দেওয়ার গোপন ষড়যন্ত্র চলছে?” প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশ সংরক্ষক নেচার্স বেকন সংস্থার কর্ণধার সৌম্যদীপ দত্ত। তাঁর কথায়, “বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে একসঙ্গে এতগুলি হাতির মৃত্যুর কথা কেউ কোনোদিন শুনিনি। প্রথম থেকেই বিষয়টি অত্যন্ত সন্দেহজনক।” সম্প্রতি এই নিয়ে একটি অনলাইন আলোচনাসভারও আয়োজন করে নেচার্স বেকন। সেখানে কাজিরাঙা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সঞ্জন ভট্টাচার্য মন্তব্য করেন, “বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে একসঙ্গে ১৮টি হাতির মৃত্যু অস্বাভাবিক বললেও কম বলা হবে। প্রায় অসম্ভব।” তাঁর বক্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভাস্কর বড়ুয়াও।
আসাম সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার এই ঘটনার স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ের অপচয়ই স্বচ্ছতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বিষয়ের দিকে আঙুল তুলছেন সৌম্যদীপ দত্ত। তাঁর কথায়, “যে জঙ্গলে ঘটনাটি ঘটেছে তা হাতিদের জন্যই সংরক্ষিত। অথচ তার পরেও একটি বড়ো বেসরকারি সংস্থাকে কারখানার আবর্জনা ফেলার জন্য জায়গা দিয়ে দিয়েছে বনবিভাগ। বনবিভাগের চোখের সামনে দিয়েই অবাধে চলছে বে-আইনি পাথর খাদান। আর এসব কাজে হাতিরা তো প্রতিকূলতার সৃষ্টি করবেই। তাই তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেই মনে করছি আমরা।”
সারা পৃথিবীজুড়ে যখন পরিবেশ ও প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন আসামের বুকে এমন ঘটনা নিয়ে চর্চা প্রায় শূন্য। অথচ এশিয়াটিক হাতি অন্যতম বিপন্ন একটি প্রজাতি। তাদের সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা তো দূরের কথা, প্রায় একটি গণমৃত্যু নিয়েও কোনোরকম উত্তেজনা নেই প্রশাসনিক মহলে। এমন ঘটনা শুধুই অবাক করা নয়, বরং নিন্দনীয় বললেও কম বলা হয়।
আরও পড়ুন
জাদুকে হাতিয়ার করেই সচেতনতা প্রচার বেহালার ম্যাজিশিয়ানের
Powered by Froala Editor