একটি-দুটি নয়, চোরাশিকারিদের ৭০টি বুলেট সহ্য করতে হয়েছিল এই হাতিটিকে

মালয়েশিয়ার জঙ্গলে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিল একটি হাতি। তার প্রজাতিটি এখন অন্যতম বিরল প্রজাতিদের তালিকাভুক্ত। হাতিটির অবশ্য এসব নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না। সে জানতও না, ভাগ্যের কী চরম পরিণতি অপেক্ষা করছে তার জন্য। হঠাৎ ছুটে এল একটি বুলেট। কপালের ঠিক মাঝখান দিয়ে ঢুকে গেল করোটির ভিতর।

আরও পড়ুন
আর মাত্র ৫০ বছর, বিলুপ্তির পথে জীবজগতের এক-তৃতীয়াংশ – জানালেন বিজ্ঞানীরা

কিন্তু শিকারির দল তখনও নিশ্চিত নয় তার মৃত্যু সম্পর্কে। ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এল বুলেট। মৃত শরীরটা সহ্য করল আরও ৭০টা আঘাত। তারপর তার লম্বা দাঁতদুটো কেটে নিয়ে গেল শিকারিরা। দেহটা ফেলে দিল সাবা নদীর জলে। পরদিন সকালে সেচের জল তুলতে এসে কৃষকরা দেখে রক্তে লাল হয়ে উঠেছে সাবা নদীর জল।

আরও পড়ুন
জার্মানির সমান আয়তনের বন-ধ্বংস ইন্দোনেশিয়ায়, বিলুপ্তির মুখে ওরাংওটাং-রা

গত বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা এটি। প্রশ্ন উঠতে পারে, এতদিন বাদে এটি নিয়ে আলোচনা কেন! সম্প্রতি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে শেষ সাদা মহিলা জিরাফ। চোরাশিকারিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে জিরাফটি। সেই নিষ্ঠুরতার প্রসঙ্গেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় আবার আলোচিত হচ্ছে মাস ছয়েক আগেকার এই ঘৃণ্য হত্যার কথাও। কোন প্রাণী ছিল সেটি?

আরও পড়ুন
সঙ্গীরা গেছে আগেই, বিলুপ্তির অপেক্ষায় দক্ষিণ আফ্রিকার শেষতম হাতি

বোর্নিও পিগমি এলিফ্যান্ট। হাতিদের অন্যতম বিরল একটি প্রজাতি। মালয়েশিয়ার ব-দ্বীপ অঞ্চলে এখন কয়েক দল পিগমি এলিফ্যান্টের বাস। সংখ্যাটা মেরেকেটে ১৫০০ হবে। বিরল এই বন্যপ্রাণীটি সংরক্ষণের জন্য মালয়েশিয়ার বিশেষ আইন আছে। এই প্রাণীটি শিকার করলে বিচারে তার ৬ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু এসব করেও অবস্থাটা বদলাচ্ছে কই! ধরা পড়লে শাস্তি হবে। আর ধরা না পড়লে হাতির দাঁত বিক্রি করে উপার্জন করা যাবে লক্ষ লক্ষ ডলার। তাই মানুষের অর্থের লোভের শিকার হতে হচ্ছে বিরলপ্রায় প্রাণীদের।

আরও পড়ুন
বন্ধুত্বে বাধা নয় দূরত্ব – চেন্নাইয়ের কাছিম ও এক প্রবাসী ভারতীয়ের সম্পর্কের গল্প

তবে শুধু শিকারীরাই নয়। এই পিগমি এলিফ্যান্টটিকে হত্যার জন্যই পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন দুজন বাগানকর্মীও। বাগানে হাতি ঢুকে গাছ নষ্ট করে দিতে পারে, কেবল এই সন্দেহের বশে প্রাণ হারাতে হল একটি নিরপরাধ প্রাণীকে।

আরও পড়ুন
চোরাশিকারীর হাতে খুন পৃথিবীর শেষ মহিলা সাদা জিরাফ

শুধু মালয়েশিয়াই নয়। পৃথিবীর সমস্ত দেশে বণ্যপ্রাণীদের প্রতি মানুষের ব্যবহার একই রকম। ‘নিষ্ঠুর’, এই একটি শব্দ দিয়েই তাকে বর্ণনা করা যায়। পৃথিবীর বুকের থেকে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে কত প্রাণী। এবং উদ্ভিদও। পৃথিবীতে মানুষ যেন একাই বেঁচে থাকতে চায়। আর সেই আগ্রাসী মানসিকতার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রকৃতিকে। তবে প্রকৃতির সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে মিলিয়েই তো মানুষের অস্তিত্ব। তাই মানুষের উপরেও এর অভিঘাত এসে পড়তে আর বেশি দেরি নেই। আমরা সেদিনও সচেতন হব তো?