প্রতি ২৬ সেকেন্ড অন্তর স্পন্দন পৃথিবীর, কারণ আজও অজানা

পৃথিবীর বুকে প্রায় দু’লক্ষ বছর কাটিয়ে ফেলেছে মানুষ। প্রস্তর যুগ থেকে হিসাব করলে মানব সভ্যতার বয়স হাজার চল্লিশেক বছর। তবে এত যুগ পেরিয়ে এসেও পৃথিবীকে সেভাবে চিনে ওঠা হয়নি। অনেক অজানাকে জ্ঞানের মুঠোয় বন্দি করলেও এখনও অবধি রয়েছে গেছে কিছু রহস্য। তেমনই এক অসমাধিত রহস্য হল এই নীল গ্রহের স্পন্দন।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। জীবন্ত কোনো জীবের মতোই ক্রমাগত স্পন্দন হয়ে চলেছে পৃথিবীর। প্রতি ২৬ সেকেন্ড অন্তর অন্তর। তবে আমাদের এই গ্রহের আলাদা করে প্রাণ রয়েছে, এমনটা নয়। এই স্পন্দন আসলে অত্যন্ত স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প। যা স্বাভাবিকভাবে মানুষের অনুভূতিতে ধরা পড়ে না। একমাত্র অত্যন্ত সংবেদনশীল সিসমোগ্রাফই শনাক্ত করতে পারে এই কম্পন।

১৯৬০ সালে বিজ্ঞানী জ্যাক অলিভার প্রথম শনাক্ত করেন পৃথিবীর এই স্পন্দন ‘মাইক্রোসিসম’কে। ল্যামন্ট-ডরথি জিওলজিকাল অবজারভেটরিতে ধরা পড়েছিল এই ক্রমাগত ক্ষুদ্র কম্পন। দক্ষিণ কিংবা মধ্য আটলান্টিককে বিবেচনা করলেও সঠিকভাবে কোনো উৎসের সন্ধান দিতে পারেননি তিনি। 

পরবর্তীকালে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে বিজ্ঞানী গ্যারেট অয়লার নিশ্চিত করেছিলেন এর উৎপত্তিস্থল। গালফ অফ গিনিয়া থেকেই সৃষ্টি হয়ে চলেছে এই স্পন্দনের। যে অঞ্চল পরিচিত ‘বাইট অফ বনি’ নামে। ২০১৩ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক কারণ হিসাবে জানান, উপসাগরের উপকূলে বিশেষভাবে ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে এই স্পন্দনের। তাঁর মতে, সমুদ্রতরঙ্গের আছড়ে পড়া উপসাগরের তীরবর্তী শক্ত মাটিতে আঘাত করায় এই স্পন্দন তৈরি হয়। অনেকটা টেবিলে বারবার ঠুকে যাওয়ার মতো করেই। 

তবে ২৬ সেকেন্ডের তারতম্য কেন দুটি স্পন্দনের মধ্যে, তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জ্যাক। বিশেষজ্ঞদের একাংশই মেনে নেননি এই মন্তব্যও। কারোর কারোর মতে ওই অঞ্চলেই সাও তোমে দ্বীপে আগ্নেয়গিরির ভেতরে ঘটে চলা কোনো ঘটনাই জন্ম দিচ্ছে এই স্পন্দনের। যুক্তি দিতে তাঁরা উল্লেখ করেন জাপানের অসো আগ্নেয়গিরির কথা। যেখানেও লক্ষ্য করা যায় ‘মাইক্রোসিসম’ কম্পন। 

তবে জাপানের ক্ষেত্রে সেই কম্পন ছড়িয়ে পড়ে না সমগ্র অঞ্চলে। নেই কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বিরতিও। গালফ অফ গিনিয়ার মধ্যে কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তা আজও হদিশ দিতে পারেনি বিজ্ঞান। পৃথিবীর অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্টের পিছনে আসল যুক্তি কী, তারই সন্ধান চলছে অক্লান্তভাবে। প্রকাশ্যে এলে হয়তো আরও একবার চমকে উঠবে মানব সভ্যতা...

আরও পড়ুন
পৃথিবীর প্রথম উড়ন্ত গাড়ি, বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেতে চলেছে শীঘ্রই

Powered by Froala Editor