বহন করেছেন ২০০ জনের মৃতদেহ, করোনাতেই থামলেন অ্যাম্বুলেন্স চালক

আরিফ খান। অনেকের কাছেই পরিচিত লাগতে পারে নামটা। করোনা পরিস্থিতিতে দিল্লির এই অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের অক্লান্ত লড়াই, সামনে এসেছিল আগেই। দরিদ্র পরিবারের শেষ কৃত্যে দায়িত্ব তুলে নিতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। শেষমেশ নিজেই আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। না, এবার আর ফিরে আসা হল না তাঁর নিজের দায়িত্বে। শনিবার সকালেই দিল্লির একটি হাসপাতালে মারা গেলেন বছর ৪৮-এর আরিফ।

দিল্লির শহিদ ভগৎ সিং সেবা সংগঠনের হয়েই অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন আরিফ। দেশে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরে হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম একজন কোভিড যোদ্ধা। ঘুম নেই। সময়ের ঠিক নেই স্নান-খাওয়ারও। সারাদিনের ঠিকানাই তাঁর হাসপাতাল। যেকোনো সময়ে ফোন করলেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হতেন আরিফ। করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তো বটেই পাশাপাশি আক্রান্তদের মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার কাজও করেছেন নির্দ্বিধায়।

শেষ ছ’মাসে দিনে প্রায় ১৪-১৬ ঘণ্টা অবধি কাজ করেছেন এই চালক। নিঃস্বার্থভাবেই। এই মহামারীর আবহ কাঁধে করে পার করে দেওয়ার একটা দায়িত্বই যেন তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, শেষ ২১ মার্চ তাঁকে দেখা গিয়েছিল বাড়িতে। তারপর থেকে যেটুকু যোগাযোগ তা মোবাইলেই। মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে জামা-কাপড় দিতে আসলেও ছেলের কাছে যেতেন না আরিফ। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পরিবারকে বাঁচাতে এতটাই সচেতন থাকতেন তিনি।    

মার্চ মাস থেকে প্রায় ২০০টিরও বেশি দেহ বহন করেছেন আরিফ। বাকি রোগীদের পরিসংখ্যান না দিলেও চলে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, যে ব্যক্তি নিজের জীবন দিয়ে দিলেন এই যুদ্ধে। তাঁকে শেষবারের জন্য তাঁর পরিবার দেখার সুযোগ পেল মাত্র কয়েক মিনিট। নিঃস্বার্থ এই যোদ্ধার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে ভগৎ শিং সেবা সংগঠনে। আরিফের এই আত্মত্যাগ, তা তো একরকমের দেশপ্রেমই। তাঁকে শহিদ বললে কি বাড়িয়ে বলা হবে এতটুকু? বোধ হয় না...

Powered by Froala Editor