করোনা ভ্যাকসিনের জন্য চলবে নির্বিচারে হাঙর-হত্যা!

বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিনই আক্রান্তের এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে পাল্লা দিয়ে। ভাইরাসের থেকে পরিত্রাণের এখন একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভ্যাকসিন। কাজেই বিশ্বের যেকোনো জীববিজ্ঞানীর কাছে ভ্যাকসিনের প্রস্তুতিই এখন অগ্রাধিকারে। তবে ভাইরাসের সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার এই লড়াই অন্যদিক থেকে সংকটের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে হাঙরকে। এমনকি ভ্যাকসিন তৈরির আবশ্যিকতার জন্য পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে হাঙরের একটা বড়ো অংশ। এমনটাই জানাল সাম্প্রতিক সমীক্ষা।

ভ্যাকসিনের সঙ্গে হাঙরের যোগসূত্র কী, তা ভেবেই অবাক লাগাই স্বাভাবিক। তবে গবেষণার স্তরে থাকা পৃথিবীর অধিকাংশ করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনেই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে স্কুয়ালিন নামক একটি জৈব তেল। যার মূল উৎস হল হাঙরের লিভার। স্কুয়ালিন মূলত ভ্যাকসিনের সঙ্গে ব্যবহৃত হয় অনেকটা অনুঘটক হিসাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এই তেল।

মাত্র এক টন স্কুয়ালিন পাওয়া যায় ৩ হাজার হাঙরের লিভার থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক একটি সংস্থা গ্রুপ-শার্ক অ্যালাইজের সমীক্ষা জানাচ্ছে, পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য যদি এক ডোজ করেও ভ্যাকসিনের দরকার হয় তবে তার জন্য মৃত্যু অবধারিত আড়াই লক্ষ হাঙরের। দ্বিতীয় ডোজের প্রয়োজন হলে সব মিলিয়ে প্রাণ হারাবে প্রায় ৫ লক্ষ হাঙর।

সংস্থাটি জানাচ্ছে, স্কুয়ালিনের জন্য প্রতি বছর প্রায় শিকার করা হয় ৩০ লক্ষ হাঙর। মাত্রাতিরিক্ত শিকারের জন্য হাঙরের বেশ কিছু প্রজাতিই বর্তমানে জায়গা নিয়েছে রেডবুকে। সেইসঙ্গে হাঙরের প্রজনন কালও দীর্ঘ হওয়ায়, ক্ষতিপূরণ হয়ে উঠছে না কোনোভাবেই। পাশাপাশি ভ্যাকসিন তৈরির দৌড় আরও বড়ো বিপত্তির দিকেই ঠেলে দেবে হাঙরের অস্তিত্বকে। সমুদ্রের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বিঘ্নিত হবে তার ফলে।

আরও পড়ুন
জীবন্ত আগ্নেয়গিরির মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য হাঙর – আশ্চর্য দৃশ্য সলোমন দ্বীপে

তবে হাঙরের থেকে পাওয়া এই তেলের বিকল্পের সন্ধানে নেছেন বিজ্ঞানীরা। আখের রস থেকে তৈরি সিন্থেটিক একটি পদার্থের ব্যবহার করা যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু পুরোটাই আপাতত গবেষণার স্তরে। ভ্যাকসিনের নিরাপদ ফর্মুলা হাতে এসে গেলে এই রাসায়নিকের জন্য অপেক্ষা না করেই যে স্কুয়ালিন ব্যবহৃত হবে বাণিজ্যিকভাবে, তা বলাই বাহুল্য। ফলে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিচ্ছে পরিবেশবিদদের কপালে...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আজকের সাহারা মরুভূমিই ছিল পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম স্থান; ঘুরে বেড়াত হাঙর, ডাইনোসর