ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রে আকস্মিক বন্যা, জারি রেড অ্যালার্ট

সন্ধে গড়িয়ে রাত নেমেছে তখন। ডিনারের থালা সাজিয়ে সবে খেতে বসেছিলেন নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা জর্জ বেইলি। তাঁর নজরে আসে, বাথরুম থেকে গল গল করে জল ঢুকছে ডাইনিং রুমে। তবে কি ভুল করে কল বন্ধ করে ভুলে গেলেন তিনি? প্রাথমিকভাবে এমনটাই মনে হয়েছিল তাঁর। তবে বাথরুমে ঢুকেই বদলে যায় ধারণা। না, নিকাশির নালা দিয়েই এই জল ঢুকছে বাইরে থেকে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাড়ির মধ্যে জলস্তর পৌঁছায় এক ফুটের কাছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেসমেন্ট ছেড়ে দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বেইলি। অল্পের জন্য রক্ষা হয়েছিল প্রাণ।

বৃহস্পতিবার রাতে এমনই বিভীষিকার সাক্ষী হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বেইলি আশ্রয় পেলেও, আকস্মিক বন্যায় প্রাণ হারালেন কমপক্ষে ৪৯ জন মার্কিন নাগরিক। আর এই হঠাৎ বন্যার পিছনে দায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকে তাণ্ডব চালানো ঘাতক ঘূর্ণিঝড় ইডা। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক আবহাওয়া বিপর্যয় হিসাবেই চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা। 

গত রবিবার লুইজিয়ানার বুকে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ইডা। তারপর আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর এগোতে থাকে ক্যাটাগরি ৪-এর ঘাতক ঘূর্ণিঝড়। প্রাথমিকভাবে দু’দিন ধরে তাণ্ডব চালানোর পর সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও, শুরু হয় ভয়াবহ বৃষ্টিপাত। আর সেই বৃষ্টিই যেন শেষ পেরেক পুঁতে দেয় আমেরিকার কফিনে। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি-সহ একাধিক মার্কিন প্রদেশই সম্পূর্ণ তলিয়ে যায় জলের তলায়। জরুরি ভিত্তিতে জারি করা হয় রেড অ্যালার্ট। তবে তারপরেও প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয় বহু মানুষের। বাড়ির বেসমেন্টে আটকা পড়ে জলবন্দি হয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ৩০ জন নিউ ইয়র্কবাসীর। অন্যদিকে নিউ জার্সিতে প্রাণ হারান আরও ৯ জন। 

আকস্মিক বন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল জুড়ে বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রেন এবং বিমান চলাচল। বন্ধ রাখা হয়েছে সাবওয়েগুলিও। তবে ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই অভিমত মার্কিন উদ্ধারকর্মীদের। গোটা অঞ্চল জলমগ্ন থাকায় এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ গতিতে উদ্ধারকার্য চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। 

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতি বছর ৭ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ভারতে

কিন্তু এর আগেও একাধিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় যুক্তরাষ্ট্রে বুকে আঘাত হানলেও এহেন কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়নি আমেরিকা। তবে হঠাৎ কেন এমন দুর্গতি? একটি মার্কিন রিপোর্টের দাবি, নিউ ইয়র্কের অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে মার খেয়েছে নিকাশি ব্যবস্থা। সরকারের অনুমতি না নিয়েই অবৈধভাবে পুনর্নিমাণ করা হয়েছে বহু বহুতলের। বাড়ানো হয়েছে বেসমেন্ট কিংবা ঘরের সংখ্যা। এই ধরনের প্রায় ১২০০ নির্মাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন খোদ নিউ ইয়র্কের মেয়র। তবে শুধুই কি অবৈধ নির্মাণের কারণে এই বন্যা? না। বরং, গবেষকদের মতে, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংই ক্রমশ ঘাতক করে তুলছে প্রকৃতির চরিত্র। ক্রমশ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই আকস্মিক পরিবর্তন জলবায়ুর। ফলে সাইক্লোন আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হচ্ছে একাধিক টরনেডো। ভারী বৃষ্টিপাত তো আছেই। আগামীদিনে প্রকৃতির এই খামখেয়ালীপনা আরও বাড়তে পারে বলেই অভিমত বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কতটা যুত করে ওঠা যাবে এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে? জানা নেই উত্তর…

আরও পড়ুন
১২০ বছরের ইতিহাসে অষ্টম উষ্ণতম বছর ২০২০, জানাচ্ছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সমুদ্রতল থেকে ৩৫০০ মিটার উঁচুতে তৈরি হল দেশের উচ্চতম আবহাওয়া কেন্দ্র