লকডাউনে বন্ধ খেলা, নেই রোজগারও; অভাবে ধুঁকছেন নদীয়ার বিশ্বজয়ী যুবক

পৃথিবী জুড়ে করোনা পরিস্থিতি তখনও থাবা বসায়নি। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। আর রানাঘাটের ছেলে সোনু কৈরীর জীবনেও সময়টা একটা বাঁকবদলের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সমস্ত সম্ভবনাকেই সমূলে নষ্ট করে দিল। সাইকেল পোলো খেলার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের সদস্য সোনু এখন দিন কাটাচ্ছেন চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে। সেইসঙ্গে ঘিরে ধরেছে অবসাদ। সব মিলিয়ে গভীর অন্ধকারে ঢাকা দেশের এই সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের।

ছোট থেকেই চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বড়ো হতে হয়েছে সোনুকে। আর্থিক অনটনের কারণে মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ঠিকা শ্রমিক হিসাবে রোড-রোলার চালানোকেই পেশা হিসাবে বেছে নিতে হয়েছে। কিন্তু এসবের মাঝে কখনও স্বপ্ন দেখতে ক্লান্তি আসেনি। সেই ছোটোবেলায় যখন দাদার হাত ধরে মল্লিকদের বাগানবাড়িতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন সোনু, সেদিন থেকেই স্বপ্ন দেখার শুরু। তারপর সংসারের চোরাপথে হারিয়ে গিয়েছে দাদার ভবিষ্যৎ। কিন্তু সোনু এভাবে হেরে যেতে শেখেননি। দীর্ঘ অনুশীলনের মর্যাদাও মিলল অবশেষে।

২০১৭ সালেই একবার বিদেশের মাটিতে খেলতে যাওয়ার ডাক এসেছিল। কিন্তু সেবারে নানা কারণে যাওয়া হয়নি। ২০১৯ সালে আবার ডাক এল। আর এবারে একেবারে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতার জন্য। ডিসেম্বর মাসের গোড়া থেকেই দিল্লিতে শুরু হয়েছিল প্রশিক্ষণ। তারপর ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর প্রতিযোগিতা চলল আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসে। সেখানে সোনুর সঙ্গে আরও ৭ জন ছিলেন ভারতীয় দলে। আর সবাই মিলে জয় ছিনিয়ে আনলেন অবশেষে। অবশ্য এটা হয়তো প্রত্যাশিতই ছিল। সাতবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫ বারই জয়ী হয়েছে ভারতীয় দল। কিন্তু এবারে সেখানে নতুন মুখ সোনু কৈরীর প্রতিভাও মুগ্ধ করেছে সকলকে।

সোনুর সাফল্যে যেন একটু আশার আলো দেখেছিল তাঁর পরিবার। নদীয়ার হবিবপুর পঞ্চায়েতের ছাতিমতলা গ্রামে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের ঝুপড়ি বাড়িটা যেন আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করার স্বপ্ন দেখেছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো পরিবারের অভাব দূর করতে ব্যর্থ হতেন না সোনু। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এখন খেলাধুলোর সমস্ত পরিসরই বন্ধ। ফলে নিজের প্রতিভার নতুন করে পরিচয় দেওয়ার সুযোগ নেই তাঁর কাছে। আবার নির্মাণ প্রকল্পের কাজও প্রায় বন্ধ। ফলে ঠিকা-শ্রমিকের কাজও পাচ্ছেন না তিনি। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের রোজগারই বন্ধ। আর এই কঠিন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে সোনুর মানসিক স্বাস্থ্য। অবসাদের ছাপ পড়েছে শরীরেও। এমন পরিস্থিতিতে কি আদৌ পাশে এসে দাঁড়াবেন না কেউ? নাকি অবহেলায় শেষ হয়ে যাবে বাংলার এক প্রতিভা?

আরও পড়ুন
কিক বক্সিং-এ বিশ্বজয়ী, জীবনের দৌড়েও অনুপ্রেরণার পাঠ দিচ্ছেন এই বাঙালিনী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পোলিও নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বাঙালি বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা

More From Author See More