রমজান মাসে অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবারের সংস্থান জাকারিয়া স্ট্রিটে

কোভিড-১৯এর সংক্রমণ এড়াতে দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। এর মধ্যেই যেমন বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা, তেমনই লকডাউনের জেরে ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। আর এই বেহাল অর্থনীতির প্রথম শিকার পরিযায়ী ও ঠিকা শ্রমিকরা। রোজগারের রাস্তা যেমন বন্ধ, তেমনই যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে ঘরে ফিরতে পারছেন না বহু পরিযায়ী শ্রমিক। কখনো আধপেটা খেয়ে বা কখনো অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের। দিল্লি বা মুম্বই-এর মতো না হলেও, কলকাতার বুকেও বাস করেন কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। এঁদের অনেকেই যেমন এসেছেন বিহার থেকে, আবার পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার ও অন্যান্য জেলা থেকেও এসেছেন অনেকে। তাঁদের অবস্থাটাও প্রায় একইরকম।

কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটে পরিযায়ী শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের আশ্রয়। নাখোদা মসজিদের সন্নিকটে এই রাস্তা অনেকের কাছেই বেশ পরিচিত। তার মধ্যে এই রমজান মাসে জাকারিয়া স্ট্রিটের কথা হয়তো অনেকেরই বিশেষভাবে মনে পড়ছে। তবে লকডাউনের জেরে ইফতার পার্টিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ তো এখন নেই। কিন্তু কেমন কাটছে সেখানকার রমজান মাস?

মহামারীর মধ্যে রমজানের সৌভ্রাতৃত্বের এক বিরল ছবির সাক্ষী থাকছে জাকারিয়া স্ট্রিট। প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে ও সূর্যাস্তের পরে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কলকাতা খিলাফত কমিটির সদস্যরা। প্রতি বছর ইফতার পার্টি যেমন হয়, অনেকটা তেমনই উদ্যোগ। তবে এবারের এই উদ্যোগের যে অন্য তাৎপর্য আছে। লকডাউনের মধ্যে জাকারিয়া স্ট্রিট অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া হতদরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবারের সংস্থান করতে পেরে খুশি উদ্যোক্তারা। শ্রমিকরাও যেন আবার নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন।

প্রথমে জাকারিয়া স্ট্রিট থেকে শুরু হলেও ইতিমধ্যে বউবাজার, টেরিটি বাজার ও ফিয়ার্স লেন অঞ্চলেও তৈরি হয়েছে কিয়স্ক। সেখানে মাস্ক পরে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পরিচ্ছন্ন খাবার পরিবেশন করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। আয়োজন খুব সামান্যই। খানিকটা ভেজিটেবল বিরিয়ানি অথবা খিচুড়ি এবং তার সঙ্গে কিছু ফল। তবে এটুকুই তো এক বিরল মানবতার অনুভূতিকে ধরে রাখছে। যখন চারদিক থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা এবং অনাহারে মৃত্যুর খবর আসছে, তখন এমন উদ্যোগই তো আশার আলো দেখায়। এভাবেই হাতে হাত রেখে এই মহামারীর বিষাদসিন্ধু পেরিয়ে যাবো নিশ্চই।