গত ৩ দশকে বদলেছে পৃথিবীর অক্ষরেখা, দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন

পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুও যে স্থির বিন্দু নয়, সে-কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা। আর এবার জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দাবি করা হল, শুধুই চৌম্বক মেরু নয়, স্থান পরিবর্তন করছে পৃথিবীর ভৌগলিক মেরুও। আর এর ফলে বদলে যেতে পারে দিনের দৈর্ঘ্যও। গত ৩০ বছর ধরে মেরু অঞ্চলের বরফ গলনকেই এর জন্য দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের আরও এক আশ্চর্য প্রভাবের কথা জানা গেল এই গবেষণার সূত্রে।

উনিশ শতকের শুরুতে যখন দুই মেরু আবিষ্কার হয়, তার পর থেকেই একটু একটু করে বদলাচ্ছে অবস্থান। তবে ঠিক কী কারণে এই স্থান পরিবর্তন ঘটছে, সে-বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট কোনো উত্তর ছিল না। এর মধ্যেই গত তিন দশকে মেরুদ্বয়ের স্থান পরিবর্তনের গতি বেড়েছে অনেকটাই। প্রায় ২০০ বছর ধরে দুই মেরু মোটামুটি ৬০০ মাইল স্থান পরিবর্তন করেছে। আর গত ৩০ বছরেই অন্তত ১২০ মাইল এগিয়ে গিয়েছে অবস্থান। অর্থাৎ বছরে মোটামুটি ৪০ মাইল। এই রহস্যের সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছেন পরিসংখ্যান তত্ত্বের হিসাবকেই।

দেখা গিয়েছে, উষ্ণায়নের জন্য মেরু অঞ্চলের বরফের গলন যত বৃদ্ধি পেয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মেরুদ্বয়ের স্থান পরিবর্তনও। আর ৯০-এর দশকের শুরু থেকেই একের পর এক হিমবাহের গলন পরিবেশের পক্ষে রীতিমতো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাসার পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ২০ বছরে মেরুপ্রদেশের অন্তত ২৬৭ গিগাটন বরফ গলে সমুদ্রে মিশেছে। আর এর বেশিরভাগটাই ঘটেছে আমেরিকা এবং কানাডার উত্তরাঞ্চলে। এর ফলে পৃথিবীর ভরের বণ্টন ক্রমশ বদলেছে। এই কারণেই দক্ষিণ মেরুর তুলনায় উত্তর মেরুর স্থান পরিবর্তনের গতি বেশি বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে মেরুদ্বয়ের স্থানান্তরের প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেই বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছে গবেষণাপত্র। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর ভৌতিক কিছু পরিবর্তন ঘটলেও মানুষের আশঙ্কার তেমন কোনো কারণ নেই। শুধুমাত্র দিনের দৈর্ঘ্য কিছুটা বাড়তে পারে। তবে তাও কয়েক সেকেন্ডের বেশি নয়। অবশ্য ইতিমধ্যে পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমে আসার ইঙ্গিত পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গত ৩০ বছরে ৪০ মাইক্রোসেকেন্ড মতো বৃদ্ধি পেয়েছে দিনের দৈর্ঘ্য। সেই পর্যবেক্ষণের সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে এই গবেষণাপত্রের বিষয়। যদিও পৃথিবীর মেরুদ্বয়ের স্থানান্তরের জন্য তেমন কোনো বিপদের আশঙ্কা না থাকলেও, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। তাই মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে তা প্রতিরোধ করতেই হবে।

আরও পড়ুন
মেরু-পরিবর্তনের কারণেই বিলুপ্ত বহু প্রজাতি, জানাচ্ছে গবেষণা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
উত্তর কানাডার শেষ মেরু-হিমবাহটিও এগিয়ে চলেছে ধ্বংসের দিকেই